ডেইলার জন্ম রহস্য (Sci-fi)
ডেইলার জন্ম রহস্য
"কে ডেইলা?
সত্যি বলতে আমি চাইনা
তুমি আসো।| তবে ভদ্রতার জন্য বলছি, এসো"
"ধন্যবাদ স্যার", ডেইলা
অফিসরুমে প্রবেশ করে প্রফেসর রুককে প্রশ্ন করল,
"স্যার আমি কি জানতে পারি
আপনি কেন বেশকিছুদিন ধরে আমার থেকে
দুরে দূরে থাকছেন?"
"কারণটা তুমি ভালোভাবেই জানো ডেইলা| তুমি
গত দুই মাস ধরে একটা ফাইলের জন্য আমাকে প্রচুর জ্বালাচ্ছ। আমি তোমার উপর ভীষণ অসন্তুষ্ট"
"কিন্ত স্যার,আপনি
আমাকে সরাসরি ফাইলটা দিলেই পারেন| আপনি যতদিন আমাকে ফাইলটা দিচ্ছেন না, আমিও
ততোদিন আপনার পিছু ছাড়বোনা
সেটা আপনি খুব ভাল করেই
জানেন।"
"কিন্ত স্যার..... ", কিছু
একটা বলতে যাচ্ছিল ডেইলা| ঠিক তখনই এক অষ্টম মাত্রার রোবটের প্রফেসর
রুকের অফিসে প্রবেশে ডেইলার কথা চাপা পড়ে গেল| রোবটটি
প্রবেশ করে মহামান্য রুককে উদ্দেশ্য করে বলল,
"স্যার আপনার জন্য একটি
কোরডানেল এসেছে | আমি কি এটা আপনার কপোট্রনে প্রবেশ করিয়ে দিয়ে যাব."
"কোন দরকার নেই| আমাকে
দাও", বলে প্রফেসর রুক রোবটটিকে চলে যেতে বলে
কোরডানেল ফাইলটির দিকে তাকালেন| ফাইলটির উপর লেখ "Na-yeila90857494447903"
ডেইলা প্রফেসর
রুককে জিজ্ঞাসা করল্," স্যার,
কোরডানেল তো এসকল বুলেট
ফাইলকে বলা হয় না যেগুলো ওয়ার্ড কিং এর পক্ষ থেকে আসে?"
মহামান্য রুক
ডেইলাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, "তুমি ঠিক বলেছ এবং ফাইলটি তোমার জন্যই
এসেছে। নাও তুমি নিয়ে যাও।"
ডেইলা প্রফেসর
রুককে ধন্যবাদ জানিয়ে অফিস রুম থেকে বেরিয়ে পড়লো!
রাতে ডেইলা
কোরডানেলটি নিয়ে বসল তার বুক ধরফর করছে|
সে এখন তার জন্মের পেছনে
কার ভূমিকা রয়েছে তা জানতে চলেছে সে এই পৃথিবীর সবচেয়ে
কনিষ্ঠ সদস্য| কে তার জন্য স্বেচ্ছায় পৃথিবীর মায়া
ত্যাগ করেছে সেটা জানার জন্য তাকে দীর্ঘ তেইশ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। অবশেষে সে জানতে চলেছে!
কাঁপা কাঁপা হাতে
কোরডানেলটি সেট করে নিজের কপোট্টরনে প্রবেশ করালো ডেইলা। কপোট্রন হলো এমন একটা যন্ত্র
যেটা মানুষের মস্তিষ্কে বসান
থাকে এবং এ কপোন্ট্রন
দিয়ে ওয়ার্ড কিং সকল মানুষকে নিয়ন্ত্রন করে থাকে | তবে
কপোষ্রন দিয়ে শুধু ট্র্যাক করার কাজই করা হয় না বরং বিনোদনের মাধ্যম হিসেবেও ব্যাবহার করা যায়| এখানে
বিভিন্ন ধরনের অনুভুতিও রয়েছে যাতে মানুষ যখন যেরকম অনুভূতি অনুভব করতে চায় করতে পারে। এমনকি তথ্য কেন্দ্রও এতে আছে কোরডানেল ফাইলটা কপোট্রনে প্রবেশ করাতেই প্রথমে ডেইলার
চোখের সামনে সাদাকালো কিছু ছবি ভেসে আসলো |
একটু পরই সাদাকালো ছবি মিলিয়ে গিয়ে একটি নারীর হলোগ্রাফিক প্রতিবিশ্ব
স্পষ্ট হয়ে আসে! প্রতিবিশ্বটি নকল|
আসল প্রতিবিম্ব ওয়ার্ড
কিং এর কার্যালয়ে |
কিছুক্ষনের
মধ্যেই নারীটি কিছু বলতে শুরু করলো|
তার কথাগুলো ছিল এরকম-
"বলতে হয়তো ভালো শোনাবেনা তবে এটাই সত্য
যে আজ, এই মুহুর্তের পর থেকে আমার আর অস্তিত্ব থাকবে না। তাই
নিজের অনুভূতিটুকু শেষবারের মত বলছি, স্বীকার
করছি, মানুষ পৃথিবীকে অনেক উন্নত করে দিয়েছে। তবে পৃথিবী
এখন যতোটা উন্নত হয়েছে ততোটুকুই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পৃথিবী আর আগের মতো নেই। এখানে নেই কোনো সবুজের সমারোহ, নেই
নীল ত্রোতের পানির ধারা, দৈত্যাকৃতি বিল্ডিংয়ের কারণে সূর্য আজ
আড়াল হয়ে গিয়েছে। কৃত্রিম
আলোর এতই জনপ্রিয়তা যে
আজ তা সূর্যকে হার মানিয়ে দিয়েছে। দিন রাত্রের কোনো পার্থক্য এখন আর চোখে
পড়েনা। মানুষের ব্যস্ততা এত বেশি যে
শেষ কবে প্রিয় মানুষটির
সাথে একসাথে আকাশ দেখা হয়েছে এটা হয়তো আকাশ নিজেও ভুলে গিয়েছে! আজ আকাশ ফেটে
বৃষ্টি পড়েনা। তীব্র ক্রোধে
মেঘ আর গর্জন করেনা| শোনা
যায় না মেঘের গুড়গুড় আওয়াজ মানুষের চেয়ে রোবটের প্রতি ভরসা বেশি। গাড়ি
চালানো থেকে শুরু করে বড় বড়
ব্যংক, অফিস
সবই রোবটিক কম্পিউটারের মাধ্যমে চলে|
মানুষের হাট, কিডনি, ব্রেইন, পালস
ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার চিকিৎসাও
করে সার্জন রোবটেরা| অল্প সংখ্যক মানুষ ক্লোন ব্যবহার করে যদিও
তা সরকারি ভাবে নিষিদ্ধ! তাজ্জব ব্যপার হচ্ছে এখন বাচ্চা জন্ম হয় ল্যাবরেটরিতে। বাচ্চার মুখ দেখার জন্য বাবা-মাকে আর
দীর্ঘ নয় মাস অপেক্ষা করতে হয়না|
মায়ের গর্ভে নিষেক
সম্পন্ন হলেই রোবটেরা ভ্রণটিকে বের
করে ল্যাবরেটরিতে তাকে
পরিপূর্ণ মানব শিশুতে পরিণত করে ফেলে। অথচ আজ থেকে দু'শ
বছর আগেও মা তার সন্তানকে দীর্ঘ নয় মাস গর্ভে রাখতো| আর
সবথেকে কষ্টদায়ক বেদনা অনুভব করে বাচ্চাকে জন্ম দিত। শুনেছি সেই ব্যথার সাথে নাকি
দুনিয়ার কোনো ব্যথারই তুলনা হতোনা। কৃত্রিম প্রোটিন,ভিটামিন, আয়োডিন, শর্করা
ইত্যাদি খেয়ে মানুষ নিজ দেহে শক্তি উৎপন্ন করে|
খাবার বলতে গেলে কৃত্রিম
রুটি- মাংস।পশুপাখি চিরতরে পৃথিবীর
বুক থেকে হারিয়ে গিয়েছে। আচ্ছা মাটি খুঁড়ে দেখলে কি এখনও ডাইনোসরের ডিম পাওয়া
যাবেঃ কুকুর নামক সেই অদ্ভুত প্রভুভক্ত প্রানীটাই বা কোথায় গেলো?
আরেকটি অবাক করার বিষয়
হচ্ছে এখন আর মানুষ মারা যায়না| যাবেই বা কিভাবে? আগেই
বলেছি রোবটেরা চিকিৎসা করে| তাছাড়া দেহের কোনো একটা কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হলে ট্র্যাকিং মেশিনে
খবর চলে যায় এবং মুহুর্তের মধ্যে সার্জন
রোবটেরা এসে সেই কোষ গুলো রিপ্লেস করে ফেলে।
এভাবে দেহের সকল কোষ সজীব রাখলে মৃত্যু কিভাবেই বা দ্বারপ্রান্তে আসবে? তবে
হ্যা, যেহেতু কেউ মারা যায়না,
তাই চাইলেও কেউ বাচ্চা নিতে পারেনা জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রনের তীব্র
হুকুম রয়েছে "ওয়ার্ড কিং" এর। কিন্তু যদি কেউ স্বেচ্ছায় পৃথিবীর
মায়া ত্যাগ করে তবে হয়তো কোনো দম্পতি বাচ্চা
নিতে পারবে|
এ কেমন দুনিয়া? আমরা
বাসযোগ্য মায়াবী পৃথিবী চেয়েছিলাম। তবে পৃথিবীর এতই উন্নতি চায়নি যে মানুষ
যন্ত্রে পরিণত হোক। চাইনি প্রকৃতির মায়া, সূর্যের
আলো, টিনের চালে বৃষ্টি পড়ার বমবাম আওয়াজ, মিহি
ঠান্ডা বাতাসে গাছের পাতা নড়ার দৃশ্য এসকল জিনিস হারিয়ে যাক।
২/৩শ বছর আগেও তো এই মন কাড়া মায়াগুলো প্রকৃতির অংশীদার ছিলো।
নাহ, আমি ইতিহাস মুখস্ত
করিনি| গত ৩৫০ বছর ধরে আমি
এ পৃথিবীতে বেঁচে আছি| এত
বছর বেঁচে থাকার অভিজ্ঞতায় ভালোবাসার পৃথিবীটাকে অনেক বদলাতে দেখেছি। আর দেখতে
চাইনা| আমি এখন এই পৃথিবীর
মায়া ত্যাগ করতে চাই| হয়তো
আমার মৃত্যুতে কোনো সৌভাগ্যবান দম্পতি তাদের পৃথিবীতে নতুন এক সদস্যের আগমন ঘটাতে
পারবে | আমি না-ইলা, এখনই বিদায় নিচ্ছি।
ঠাস করে হলোগ্রাফিক ছবিটি গায়েব হয়ে গেল| ডেইলা এতক্ষন শ্বাস বন্ধ করে হলোগ্রাফিক প্রতিবিম্বের
মানুষটার কথা শুনছিল। এই কোরডানেলটাই
তার জন্ম রহস্য পরিষ্কার করে দিল| অন্য রিপোর্ট দেখার প্রয়োজনীয়তা সে অনুভব করলো না| ডেইলা সাবধানে কোরডানেলটা নিজের
কপোষ্টরন থেকে
বের করে আনলো| কোরডানেলটা হাতে
নিয়ে তাকাতেই বুক চিরে একটি দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে এল| না-ইলা নামক নারীটির জন্য আজ সে
পৃথিবীর আলো
দেখতে পাচ্ছে| যদিও মানুষটি ডেইলার
জন্য না, নিজের পৃথিবীর বদলে
যাওয়া সহ্য করতে না পেরে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছিলেন| তবুও সে
যেখানেই থাকুক ভালো থাকুক।
No comments