একটি লাঠি দিয়ে যেভাবে মাপা হল পৃথিবীর পরিধি


একটি লাঠি দিয়ে যেভাবে মাপা হল পৃথিবীর পরিধি

খুব বেশি দিন আগের কথা না(!),মাত্র ২২০০ বছর আগের কথা।
মিসরের এক ব্যক্তি কেবলমাত্র একটি লাঠির সাহায্যে সারা পৃথিবীর পরিধি প্রায় নিখুতভাবে মেপে ফেলেছিলেন।না!লাঠিটা মোটেও কোন জাদুর লাঠি ছিল না।সাধারণ আর আট-দশটা লাঠির মতই ছিল।কেবল গণিতের সাহায্যেই তিনি এই অসাধ্য সাধন করেছিলেন(এটা শুনে অনেকেই ভাবছো তিনি বুঝি ক্যাল্কুলাস-ত্রিকোণমিতির মত গণিতের বড় বড় অস্ত্রের সাহায্যে তা করেছেন কিন্তু মোটেও তা নাক্লাস সিক্স-সেভেনের বাচ্চারা যা জানে,সেটাকেই তিনি কাজে লাগিয়েছেন)সেই ব্যক্তিটি হলেন গণিতবিদ ইরাটোস্থিনিস।যাকে আমরা কম বেশি সবাই চিনি “ইরাটোস্থিনিস ছাকনি”র জন্য।

ইরাটোস্থিনিস ছিলেন পেশায় একজন লাইব্রেরিয়ান।লাইব্রেরিটা ছিল মিসরের আলেকজান্দ্রিয়ায়।তো সেই লাইব্রেরিতে বসে তিনি একদিন বই পড়ছিলেন।হঠাত,তার চখে পড়ল বইয়ে লেখা ২১ জুন মধ্যদুপুরে মিসরের সাইন নগরীতে কোন কিছুর ছায়া পড়ে না।তখন সূর্য ঠিক মাথার উপরে থাকে।অর্থাত,একটি লাঠি পুতে রাখলে তার কোন ছাইয়া পড়বে না।এমনকি কুয়া বা নদীতে উকি দিলে মানুষের মাথার কারণে কুয়া বা নদীতে সূর্য দেখা যাবে না...!!!
তিনি ভাবলেন,বাহ!বেশ তো।আলেকজান্দ্রিয়াতে বসসেই তিনি এ পরীক্ষা করবেন।তো,সে ব্ছর ২১ জুন আলেকজান্দ্রিয়াতে তিনি একটা লাঠি পুতলেন।কিন্তু একি...!!!আলেকজান্দ্রিয়াতে ঠিকই ছায়া পড়ছে।

তখন তিনি ভাবলেন,আচ্ছা!জিনিসটাকে কি তাহলে এভাবে চিন্তা করা যায়?
তিনি কী চিন্তা করলেন,সেটা দেখা যাক।
তিনি জানতেন,পৃথিবীর উপরে যে বস্তুই থাক,সেটা বরাবর ধীরে ধীরে নিচের দিকে রশ্নি টানলে তা পৃথিবীর কেন্দ্রে গিয়েই মিলবে।
যেমন,AB বা CD.

চিত্রঃ১.১

আবার সূর্য পৃথিবীর চেয়ে অনেক বড়।তাই সূর্য থেকে পৃথিবীতে আলো আসে সমান্তরালে(চিত্রঃ১.১)।
সাইন নগরীতে যেহেতু এইদিন ছায়া পড়ে না,তাই CD
এবার আমাদের জানা সেই ক্লাস সিক্সের উপপাদ্য কাজে লাগালেন ইরাটস্থিনিস।
“দুইটি সমান্তরাল বাহুকে তৃতীয় আরেকটি বাহু ছেদ করলে উতপন্ন একান্তর কোণদ্বয় পরস্পর সমান হয়”
অর্থাৎ,<FAE=<AEC.

এখন তিনি যদি <FAE
লাঠির ছায়ার সাহায্যে তিনি খুব সহজেই <GBA ,তার 50



(কিছু মাথায় ঢুকছে না?তাহলে ভিডিওট দেখো...!!!)

তার জানা ছিল যে আলেকজান্দ্রিয়া থেকে সাইন নগরীর দূরত্ব প্রায় 5000
এবারে সেই ছোটবেলার ঐকিক নিয়ম।

1/50 অংশ এর জন্য 5000
সুতরাং,১ বা সম্পূর্ন অংশের জন্য 5000*50 স্টেডিয়া
                                                  2,50,000

এবার এই মানকে কিমি এ প্রকাশ করলে চক্ষু কপালে উঠে যাবে।কিমি এর হিসাবে এর মান হল প্রায় 39,250
আর আধুনিক গবেষণায় জানা যায় পৃথিবীর পরিধি মূলত 40,075
অর্থাত,ইরাটোস্থিনিস কেবল একটা লাঠি পুতে যে হিসাব বের করলেন তা কেবল 2%

গণিতকে ব্যবহার করে অতিক্ষুদ্র একটা জিনিসের সাহায্যে যে কত বিশাল একটা কাজ করে ফেলায় যায় তা তো দেখতেই পাচ্ছ।
সত্যি হোক গণিতের স্বপ্নযাত্রা।


সাজ্জাদুর রহমান

(৩ এপ্রিল ২০২০,প্রথম আলো গণিত ইশকুলে ছাপা)


1 comment:

Theme images by dino4. Powered by Blogger.