পিন্টুস (Sci-fi)

পিন্টুস

 দেশের অবস্থা ভালো না। প্রতিদিনই পাল্লা  দিয়ে বাড়ছে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। আজকে খবরে যখন মির্জাদি এসে বলল,”আজকে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৬৫৯ জন। তখন সবার চোখ কপালে উঠে গেল। সবচেয়ে বেশি চিন্তা করতে লাগল আব্বু। 

  • আর এখানে (আমাদের বাসায়) থাকা যাবে না। দেশের অবস্থা ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। 
  • জ্বি, আব্বু। কালকে ছিল আক্রান্তের সংখ্যা ১২৯৩। আর আজকে আক্রান্তের সংখ্যা এত।
  • চল আমরা গ্রামের বাড়ি চলে যাই। সরকার দূরপাল্লারে গাড়ি বন্ধ করে দিয়েছে । একটা সিএনজি রিজার্ভ করে নিয়ে চলে যাই।

জানি সেখানে গেলে আমার লেখাপড়ার তেরোটা বাজবে। কারণ লেখাপড়া তেমন একটা হচ্ছে না। বছর শুরু হতে না হতেই স্কুল বন্ধ হয়ে গেল। যাইহোক তবুও আমি সাই দিলাম কারণ আমার বাসার চারপাশের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। কেউ তেমন একটা নিয়ম মানছে না। এইতো পরশুদিন আমার বাড়ির সামনে পুলিশ এসেছিল। পুলিশ কোনো এক জায়গা থেকে খবর পেয়েছিল এখানে খেলা হচ্ছে। কিন্তু পুলিশ যেভাবে খবর পেয়েছিল ঠিক সেভাবে পুলিশ আসার এক মিনিট আগে জনগণও খবর পেয়ে গেল পুলিশ আসছে। তখন সাথে সাথে মুদির দোকান বন্ধ হয়ে গেল। তবে যারা খবর শুনে গুজব মনে করছিল তারা পুলিশ দেখে পুরুরে ঝাপ দিল। তখন এক পুলিশ বলে গেল,”সামনের দিন যদি আবার খেলা দেখি তাহলে বাড়িত গিয়ে তোরে বাপেক ধরে বারেবোনে।কিন্তু অগত্যা পরের দিন দিব্যি খেলা চলল।  

যাইহোক আব্বু ইতিমধ্যে গাড়ি ঠিক করে ফেলেছে। এখন পরশু যাওয়া। গ্রামের বাড়িতে টিভি নাই। আর এখন যে অবস্থা টিভি কেনার উপায়ও নাই। তাই টেলিভিশনের চ্যালেনগুলো ভালো করে দেখে নিলাম। দেখলাম কয়েকদিনের মধ্যে পৃথিবীর যেকোনো স্থানে উল্কাপাত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। 

     (গ্রামের বাড়ি যাওয়ার কয়েকদিন পর)

  • আব্বু ডাব গাছের ডাবগুলো বড় বড় হয়ে গেছে না? ওইগুলো তো এখন পাড়া লাগবি ।
  • হ্যাঁ, ঠিক বলেছিস তো।

 এমন সময় আমার দাদা আমায় এসে  আমার জন্মদিনে(আজ আমার জন্মদিন) এক আতশ কাচ উপহার দিল। আমি তো খুব খুশি। 

যাইহোক আব্বু গাছে উঠল আর আমি নিচে দাড়ালাম। কে যেন মনে হয় চেচিয়ে উঠল। পরে এদিকে ওদিকে তাকিয়ে দেখলাম তেমন কেউ নাই। নিজের ভুল ভেবে আবার বাবার কাজের দিকে মন দিলাম। 

একটু পর আব্বুর ডাব পাড়া শেষ। তখন আমি ঘুরছি আতশ কাচটি নিয়ে। এদিক ওদিকের সব জিনিস খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছি। এমন সময় আমার চোখে এন্টেনা বিশিষ্ট  এক জীব ধরা পড়ল আর আমার তো কৌতুহল বেশি। আর এই কৌতুহল মিটাতে গিয়ে আমি আবিষ্কার করেছিলাম লাইফাই নামক এক বিশেষ যন্ত্র যাতে লাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট কানেকশন পাওয়া যায়। তার পুরস্কার স্বরূপ জেলা পর্যায়ে বিজ্ঞান প্রজেক্টে ফার্স্ট হয়েছিলাম।

জিনিসটা কি বলে যখনই আমি ফেলে দিতে যাচ্ছি ঠিক তখন

  • রাতুল আমায় ফেল না।
  • এটা কি হলো?
  • অবাক হচ্ছো তো। হ্যাঁ অবাক হওয়ারই বিষয়। 
  • তুমি আমার নাম জানলে কি করে?
  • আমি আরো অনেক কিছুই জানি। আজ তোমার জন্মদিন। তুমি ক্লাসের ফার্স্ট বয়। লেখাপড়ায় ভালো। তবে জেএসসি পরীক্ষায় খারাপ রেজাল্ট করেছো বলে তোমার মনটা খারাপ। তুমি যে এখন কি ভাবছো তাও আমি জানি। 
  • তাও তুমি জানো।
  • হ্যাঁ। তুমি এখন ভাবছো আমি আসলে কি।
  • একদম ঠিক। 
  • আমি হলাম এক রোবট যাকে বর্তমানে নানা অসাধু ব্যবসাইয়ি খুজে বেড়াচ্ছে। আমার বাস দূরের আল্টারফা নামের গ্রহে। আমরা তোমাদের থেকে ২৪৮ বছর এগিয়ে আছি। 
  • তাহলে তুমি এখানে এলে কি করে? আর আমার ভাষাই বা বুঝছো কি করে? আর তখন............ কথা শেষ করার আগেই সে উত্তর দিল
  • হ্যাঁ, তখন তুমি ঠিকই শুনেছো। ওই শব্দ আমিই করেছিলাম। তোমার সব কৌতুহল এখনই আমি নিবারণ করে দিচ্ছি দাঁড়াও। নাম আমার পিন্টুস। আমি আমার স্পেশসিপ নিয়ে যাওয়ার সময় উল্কাপিণ্ডের সাথে ধাক্কা খাই। আমি আমার বন্ধুদের বলে দিয়েছি আমি কোথায় আছি। ওরা আমায় ৩-৪ দিনের মধ্যে নিতে আসবে। আমি পৃথিবীর সব ভাষা জানি। আমার লোকেশন অনুযায়ি সেই ভাষা বযবহার হয়। আমি এখানে আসার পর ডাবগাছে সাথে আটকে ছিলাম। ডাবগাছ থেকে মুক্ত হয়ে পরে যাবার সময় আমিই কেদেছিলাম। আর সেই শব্দ তুমিই শুনতে পেয়েছিলাম। কারণ আমি আর স্পেসমেকার তোমার হার্টের সাথে লাগিয়ে বুঝেছিলাম তোমার মনের কথা। এখনকার সব কথাও আমি এর মাধ্যমেই বলেছি।

আমারো আর বুঝতে বাদ থাকলো না কেন  তাকে পৃথিবীর অসাধু ব্যবসায়ীরা খুজে বেড়াচ্ছে।

এমন সময় আমার বোন এসে আমার সামনে এসে হাজির হলো।

সে এসে আমাকে বলল, আচ্ছা ভাইয়া তোর চুল এত ছোট আর আমার চুল এত বড় ক্যান?

  • তখন হুট করে আমি পাশের দিকে দেখিয়ে বললাম ওই দেখ ওই ঘাস বড় আর ওই ঘাসটা ছোট ক্যান?
  • তুই এইটাও বুঝিস না ভাইয়া। ওই ঘাসের নিচে মাটির আছে তাই ওইটা ছোট। আর অপরটার নিচে গোবর আছে তাই ওইটা বড়। 
  • এইতো এখন বুঝেছিল তোর মাঠায় গোবর আছে তাই তোর চুল বড়। 

মনে মনে পিন্টুসকে অনেক ধন্যবাদ দিলাম। সেও উত্তর দিল। সীমা লজ্জামুখ নিয়ে চলে গেল। আসলে আমি জিরো কাট দিয়ে চুল কেটে আসিছিলাম। বেশি বাইরে যেতাম না তো। আসলে সেলুনে গিয়েও অনেকে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে তো তাই। ইতিমধ্যে খবর পেলাম আমাদের গ্রামের বাড়িতেও একজনের করোনা পজিটিভ। এখন খুটিয়ে দেখলাম সে আমাদের বাড়িতে এসেছিল। অগত্যা করোনা টেস্ট করতে গেলাম। টেস্ট করাতে গিয়ে দেখি এক ডাক্তার টেস্ট করার জন্য ৩৫০০ টাকা নিচ্ছে। কিন্তু আমরা কেউ তো আর টাকা আনিনি। তাহলে এখন করবো কি?

  • মনে মনে একজনকেই ভাবলাম। পিন্টুস। তখন আমার মাথায় বুদ্ধি এলো। এলো বললে ভুল হবে পিন্টুস দিল। 

আমি সাথে সাথে হাচি দিলাম ডাক্তারের মুখে। সেই ডাক্তার সাথে সাথে নিজের করোনা টেস্ট করাতে চলে গেল।  একটু পর আবার খোজ নিয়ে দেখলাম সেই ডাক্তারের রিপোর্ট নেগেটিভ। ভাগ্যিস তখিন পিন্টুস ছিল তা না থাকলে যে কোন বিব্রতকর অবস্থায় পড়তাম। ইতিমধ্যে তার সাথে আমার গড়ে উঠেছে সখ্যতা। তাকে ছাড়া আমি আর থাকতে পারি না। পরের দিন বাড়ি থেকে একটু বাইরে যাচ্ছি বলে বাবা মার কাছ থেকে অনুমতি নিলাম। একটু দূরে যেতে কেউ আমায় তুলে নিল মাইক্রোর ভিতরে। তখন আবার স্মরণ কলাম পিন্টুস। সে এসে আমায় উড়িয়ে নিয়ে গেল। যখন তারা ঠেকাতে লাগল তখন তাদের গায়ে ৩০০০ ভোল্টের শক লাগল। তারপর পিন্টুস আমায় বলল,”ওরা বুঝে গিয়েছে  আমি কার হার্টের সাথে স্পেস মেকার বসাইছি।আর ভয় নাই আজ আমি চলে তারপর ওরা আর কোনো খবর পাবে না। ওরা আসলে অসাধু বযবসায়ী। আমার কাছ থেকে আত্যাধুনিক জিনিস সমন্ধে জানতে চায়। 

এখন রাত।একটু পরেই চলে যাব”, বিষণ্নমুখে বলল পিন্টুস।

  • চলেই যাবে
  • তবে যাবার আগে তোমাকে দিয়ে যেতে চাই কিছু জ্ঞান যা তোমাকে ধনী হতে অনেক সাহায্য করবে। 
  • না, আমার লাগবে না। 
  • তাহলে কি চাও , কিছু না দিয়ে আমি তো এখান থেকে যাবো না।

পিন্টুস নাছর বান্দা হয়ে গেল। শেষ্মেষ তাকে ছাড়াতে না পেরে বললাম

  • চল, আকাশে উড়ে আসি।
  • এই সামান্য জিনিস চাচ্ছো ক্যান?
  • আমার কাছে  তোমার বন্ধুত্বটাই বড়।

দুজন স্তব্ধ আকাশে পাড়ি দিলাম। মজা করা শেষে নিচে নেমে আসলাম।

একটু পর বাহির আলোকিত হয়ে উঠল। সে মুখ ভার করে চলে যাচ্ছে। আর আমারো মুখ ভার। তার সাথে চলে যাচ্ছে না ফুটা কৃষ্ণচূড়ার অপ্রস্তুত প্রাণের অপূর্ণ মাধুরিগুলোর মতো আমার অপরিসীম বন্ধুত্ব। দুজইনেরই চোখ দিয়ে পড়তে থাকল পানি। আর কোনো কথা বললাম। আর এমূহূর্তের স্বাক্ষী হলো সন্ধ্যার কালো কোকিল। পরিশেষে ভাবলাম আর কোনোদিন কি হবে দেখা তোমারই সাথে পিন্টুস? অনেক ভেবে দেখলাম এ স্বার্থপর পৃথিবী তোমার জন্য নয় পিন্টুস।

ইহা ভাবতে ভাবতে কখন যে ভোরের সকাল হয়ে গেল বুঝতেই পারি নি।

 

 

লিখেছেনঃ

হা-মীম মাসুদ

পাবনা কালেক্টরেট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ


No comments

Theme images by dino4. Powered by Blogger.