আজকের বিশ্বে আগামীর এলিয়েন (Sci-fi)
আজকের বিশ্বে আগামীর এলিয়েন
স্কুল সাজানো নিয়ে সবাই আজ ভীষণ ব্যস্ত। এক সপ্তাহ পর থেকে স্কুলে সাইন্স অলিম্পিয়াড শুরু হবে। অংশগ্রহণকারীরা নিজেদের সঙ্গীদের তালিকা দেখে খুঁজে নিচ্ছে। শুভ্রও তার ব্যতিক্রম নয়। শুভ্রর সঙ্গীর নাম আরোশী। আরোশীকে খুঁজতে খুঁজতে মাঠে এলো শুভ্র। দেখলো, আরোশী দাঁড়িয়ে আছে মাঠের এককোনায় আকাশের দিকে তাকিয়ে। আরোশীকে ডাকতেই লাফিয়ে উঠল। পরিচিতি পর্ব সম্পন্ন করতেই টিফিন পিরিয়ড শেষ হয়ে গেল। আরোশীর সাথে দেখা করার জন্য শুভ্রর মন কেমন করছিল। পরদিন স্কুলে এসে আরোশীর সাথে কথা বলল সাইন্স অলিম্পিয়াড সম্পর্কে। টিফিন পিরিয়ডে দু’জন গল্প করছিল।
আরোশী
জিজ্ঞেস করল ‘তুমি কোথায় থাক?’
উত্তরে
শুভ্র বলল
‘আমাদের বাসা মিরপুর-১০ এ। বিল্ডিঙের নাম রোস প্যালেস। আর তুমি?’
‘আরে! আমিও তো মিরপুর-১০ এর রোস প্যালেসেই থাকি। তোমরা কয় তলায় থাকো?
আমরা ১০ তলায় থাকি।’
‘আমরা ৪ তলায় থাকি। আজ বিকেলে ছাদে দেখা করি?’
‘অবশ্যই।’
এমন
সময় ঘন্টা দিয়ে দেওয়ায় ওদের আর কথা বলা হলো না।
ছাদে
৪ টায় দেখা করার কথা। কিন্তু এখন বাজে সাড়ে ৪ টা। শুভ্র ভাবলো, আরোশী
যদি রাগ করে? ছাদের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে দেখল, আরোশী একা দাঁড়িয়ে আছে। এবারও আরোশীকে ডাকতেই ও চমকে উঠল। ওরা সাইন্স
প্রজেক্ট নিয়ে অনেকক্ষণ কথা বলল। ১১ তলায় ছাদ হওয়াতে ১০ তলা থেকে কেউ ডাকলে ছাদ
থেকে শোনা যায়। আরোশীর মায়ের ডাকে দু’জনই চলে গেল। রাতে
কারোরই ঘুম আসছিল না বলে দুজনই ছাদে গিয়ে গল্প করতে লাগলো। যদিও প্রোজেক্ট নিয়ে
আলোচনা শুরু করেছিল, তবে আলোচনা গড়াতে গড়াতে এলিয়েনে
পৌছালো এবং এটাও জানা গেলো ওদের মা-বাবারা বিজ্ঞানী। দুজনেই শুনে অবাক। ওসব ভুলে
আবার তারা এলিয়েনের আলোচনায় মত্ত হলো।
শীতের
ছুটিতে কুয়াকাটা বেড়াতে গেলো ওরা।
রাতে
হোটেলের ছাদে দাঁড়িয়ে গল্প করছিল ওরা দুজন। আরোশী শুভ্রকে বলে একটু সময়ের জন্য
নিচে গিয়েছিল। এমন সময়, আকাশে শুভ্র অদ্ভুত কিছু একটা দেখল।
মনে হলো, যেন আকাশে কেউ নীল আলো তাক করে
রেখেছে। অবশ্য ওটা ২-৩ সেকেন্ড পরই চলে গেল আলোটা।
আরোশী
এসে শুভ্রকে বলল, 'মা বলেছে নিচে ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়তে।'
কুয়াকাটা
থেকে ফেরার পর সবকিছুই সাধারণভাবে চলছিল। তবে আরোশীর আচরণ কিছুটা পাল্টে গিয়েছিল
সেই রাতের পর। হঠাৎ একদিন, একটা আপেলের মতো ফল নিয়ে শুভ্রর ঘরে গেলো আরোশী।
ফলটা খেয়েছিল শুভ্র। কিন্তু, তারপর কি হলো, তার মনে নেই।
চোখ
খুলতেই শুভ্র দেখল ও একটা অন্ধকার ঘরে বসে আছে। ওর পাশে আরো একজন ছিল। শুভ্রর ঘোর তখনও
কাটেনি। হঠাৎ একটা অচেনা কণ্ঠ কথা বলে উঠল। শুভ্রর ঘোর কেটে গেল। ও জানতে চাইলো, কে
কথা বলছে। ৫-১০ মিনিট পর একটা কিছু অন্ধকার ফুঁড়ে বেড়িয়ে এলো।
দেখে
মনে হলো,
আরোশী-ই। কিন্তু, ২-৩ সেকেন্ডের মধ্যেই
চেহারা পাল্টে অদ্ভুত এবং হাস্যকর হয়ে গেল। দেখতে কিছুটা এমন- মাথাটা মানুষের
তুলনায় বড়, চোখ দুটোও তাই, পায়ের
আঙ্গুল নেই, হাতের কানি আঙ্গুল নেই, মাথায় কোনো চুল নেই, গায়ে কোনো লোমও নেই। বাকি
সবকিছুই মানুষের মতো। এমনকি গায়ে মানুষের মতো জামাও আছে।
শুভ্র
তাকে জিজ্ঞেস করল, 'আমি এখানে কেন? আর আমার
পাশে এটাই বা কে? তুমি কে? তুমি
কোথা থেকে এসেছো?'
অদ্ভুত
দর্শন প্রাণীটি বলল, 'এতো প্রশ্ন একসাথে করলে উত্তর দেবো কীভাবে?
এক এক করে উত্তর দিচ্ছি ।
প্রথম
প্রশ্নের উত্তর- আমি তোমাকে কিছু মেসেজ দিতে চাই।
দ্বিতীয়
প্রশ্নের উত্তর- তোমার পাশে আরোশী বসে আছে।
তৃতীয়
ও চতুর্থ প্রশ্নের উত্তর- আমি টাইম ট্রাভেল করে তোমাদের পৃথিবীতে আসা ভবিষ্যতের
মানুষ।
তুমি
কি জানো,
আমার চেহারার এই অবস্থার কারণ কি? কার
হলো তোমরা। মানে বর্তমান সময়ের মানুষরা। তোমরা পরিবেশ দূষণ এতোটাই বাড়িয়ে ফেলেছ যে,
২০০২০ সালে পৌছাতে পৌছাতে মানুষের অবস্থা এমন হয়ে যাবে। তোমরা কি
জানো, তোমরা চাইলে এই পরিস্থিতির পরিবর্তন করতে পারো?
'
এবার
আরোশী কথা বলল। ও জিজ্ঞেস করল, 'কীভাবে?'
উত্তরে
এলিয়েনটা/ অদ্ভুত দর্শন প্রানীটা বলল, ‘তোমরা এখন থেকেই পরিবেশ দূষণ, জলবায়ু পরিবর্তন এসব নিয়ে কাজ করবে।’
আরোশী
বলল, ‘সে না হয় করব। কিন্তু বাড়িতে না পৌছালে সেসব হবে কী করে?’
‘বাড়িতে তোমাদের আমিই পাঠাবো। তার আগে তোমরা কথা দাও, আমার কথা কাউকে বলবে না আর পরিবেশের উন্নতির জন্য কাজ করবে।’
‘কথা দিলাম।’
আবার
সবকিছু অন্ধকার হয়ে গেল। চোখ খুলে আরোশী দেখল, শুভ্র হাতে সেই ফলটা
নিয়ে টেবিলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে। বিছানা থেকে উঠতে গিয়ে এলিয়েনটার কথা মনে পড়ল।
আরোশী ভেবেছিলো, ওটা বোধ হয় স্বপ্ন ছিল। কিন্তু শুভ্রকে
বলার পর শুভ্র বলল, সেও ওরকম কিছু একটা শুনেছে বা দেখেছে।
তারা এটা নিয়ে মাথা ঘামালো না। কিন্তু, কিছুদিন পরেই এমন
এক ঘটনা ঘটলো, যা বলার মতো না। আরোশী আর শুভ্র বসে
নিজেদের কাজ করছিল। হঠাৎ, আরোশীর চোখের ভেতরটা চকচক করে
উঠল আর সঙ্গে সঙ্গেই ওর চোখ থেকে দেয়ালে আলো পড়ল। আলোর মধ্যে থেকে এলিয়েনটা আগে
বলা কথাগুলো আবার বলল। এবার আরোশী আর শুভ্র বুঝল, ওটা
কোনো স্বপ্ন ছিল না।
এর
পরেই শুরু হলো ওদের কাজ। পড়াশোনা শেষ করে ওরা দুজন পরিবেশ-প্রকৃতি নিয়ে কাজ করতে
লাগলো। এবং,
এলিয়েনকে দেওয়া কথা তারা রাখতে পারলো।
আরোশীদের
বয়স এখন ৮০-এর কাছাকাছি। আরোশীর শরীর খুব খারাপ। যখন-তখন কিছু একটা হয়ে যেতে পারে।
শুভ্র আরোশীর পাশে বসেছিল। আরোশীর হাত ধরেছিল শুভ্র। আগের মতো আবার আরোশীর চোখ
চকচক করে উঠল আর আগের মতো আলো দেয়ালে পড়ল। এবং, সঙ্গে সঙ্গে
এলিয়েনটাকে দেখা গেল। ওর চেহারার অনেক উন্নতি হয়েছে। ও বলল ‘ধন্যবাদ। পরিবেশকে উন্নতির দিকে এগিয়ে দেওয়ার জন্য। তোমাদের আগামী
প্রজন্মও একই কাজ করে পরিবেশকে ঠিক করে তুলুক।’ আলোটা চলে
গেল, আরোশী একটু হেসে চোখ বন্ধ করলো। সেই যে ও হেসেছিল,
ওটাই শেষবার।
সারা
জীবন সেই হাসি ওর ঠোঁটেই রয়ে গেল।
আরিশা
আহনাফ
নালন্দা
উচ্চ বিদ্যালয়
No comments