আ্যান্টিম্যাটার
আ্যান্টিম্যাটার
আচ্ছা, আপনাকে যদি বলা হয়, একটা টমেটোর সমান বস্তু দিয়ে পুরো নিউইউর্ক শহরকে ধূলিসাৎ করে দেওয়া যাবে কিংবা তা থেকে মাত্র কয়েক ঘন্টায় একটি পারমানবিক বিদুৎকেন্দ্র কর্তৃক সার্বিকভাবে উৎপাদিত বিদ্যুতের চেয়েও বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে? আপনি হয়তো ভাবতে পারেন আমি আপনাকে ধাপ্পা দিচ্ছি। কিন্তু আপনি জানলে অবাক হবেন বর্তমান পদার্থবিজ্ঞান এই ধারণাকে শুধু বিশ্বাসই করে না, বরং এর তাত্ত্বিক প্রমান ও দেখাতে পারে। আর এই সব কিছুর মূলে রয়েছে পদার্থবিজ্ঞানের সবচেয়ে বিস্ময়কর তত্ত্ব, আ্যান্টিম্যাটার তত্ত্ব।
আ্যান্টিম্যাটার সম্পর্কে জানতে হলে, আমাদের সর্বপ্রথম জানতে হবে আন্টিপার্টিক্যাল সম্পর্কে। আমরা জানি প্রত্যেক
পদার্থেরই কিছু মৌলিক কণা থাকে (যেমনঃইলেকট্টন, প্রোটন ইত্যাদি)।এদের নিজস্ব
কিছু ধর্ম আছে(যেমনঃ ইলেকট্রন খনাত্বক চার্জ বিশিষ্ট প্রায় ভরহীন একটি কনা)।ঠিক
তেমনইভাবে এসকল কনার সম্পূর্ণ বিপরীত এক ধরনের কনা আছে, যাদের ধর্মও এসকল
কনার সম্পূর্ণ বিপরীত, এদেরকেই আমরা অ্যান্টিপার্টিক্যাল বলে চিনিযেমনঃ ইলেকট্রন
এর আ্যান্টিপার্টিক্যাল পজিট্রন হলো ধনাত্মক চার্জবিশিষ্ট প্রায় ভরহীন একটি কনা।)
আর আ্যান্টিপার্টিক্যাল দিয়েই তৈরি হয় পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান বস্ত,আ্যান্টিম্যাটার বা প্রতিপদার্থ।
আ্যান্টিম্যাটার পদার্থবিজ্ঞানের সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয়।তার মূল কারন এর অকল্পনীয় ধ্বংসাত্বক
ক্ষমতা।আপনি হয়তো জেনে অবাক হবেন, মাত্র এক কেজি ভরের আ্যান্টিম্যাটার থেকে ১০
বিলিয়নেরও বেশি টিএনটি উৎপাদন করা সম্ভব!!! এছাড়াও মাত্র দেড় কেজি আ্যান্টিম্যাটার দিয়ে চোখের পলকেই
১০০০কিমি ব্যাসবিশিষ্ট এলাকাকে প্রাণশৃণ্য করে ফেলা যাবে!!
এর এই ধ্বংসলীলার পরিমাণ সম্পর্কে জানতে আ্যান্টিম্যাটার তত্তের জনক পল ডিরাক ব্যবহার
করেছেন বিখ্যাত সূত্র E=mc^2 যা থেকে জানা যায় আ্যান্টিম্যাটার যদি কোন ম্যাটার বা
পদার্থের সংস্পর্শে আসে তাহলে প্রচন্ড বিস্ফোরনের মাধ্যমে তার সম্পূর্ণ ভর শক্তিতে
পরিণত হয়।যার মান দাঁড়ায় প্রতি গ্রামে ৯*১০^১৩ জুল!!!! এরকম কয়েক কেজি
ত্যান্টিম্যাটার যদি শক্তিতে পরিণত হয় এবং সেই শক্তি যদি ব্যবহার করা যায় তাহলে সমগ্র বিশ্বের
কয়েক প্রজন্মের জন্য শক্তি নিয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তা করতে হবে না!ফলে সমগ্র
বৈজ্ঞানিক মহল আজ ওঠে পড়ে লেগেছে এর পিছন।কিন্তু এত আশায় জল ফেলে দিচ্ছে
আ্যান্টিম্যাটারের দুষ্প্রাপ্যতা। কারণ আ্যান্টিম্যাটার এতই দুর্লভ যে মাত্র
কয়েক ন্যানোগ্রাম আন্টিম্যাটার তৈরি করতে গিয়ে পথে বসতে হবে যেকোনো উন্নত দেশকে। আর এর এই দুম্প্রাপ্যতার কারণ
এর অনিয়ন্ত্রিত ধ্বংসাত্মকতা।সাধারণত কোনো আ্যান্টিপার্টিক্যাল, কোনো পার্টিক্যালের সংস্পর্শে
এলেই ধ্বংস হয়ে যায়।ফলে প্রকৃতিতে ত্যান্টিপার্টিক্যাল প্রায় পাওয়াই যায়
না।ফলে আ্যান্টিম্যাটারও প্রকৃতিতে তৈরি
হয় না।
আর ল্যাবরেটরিতে যদি তা তৈরি করতে হয় তাহলে তার খরচ এর পরিমাণ হবে আকাশছোয়া।উদাহরণসরূপ
বলা যায়, ২০১২
সালে মাত্র কয়েক হয়েছে ২০মিলিয়ন ডলার!! তাই বলে মানুষের স্বপ্ন থেমে থাকে
না।একসময় মানুষ আগুনও জ্বালাতে পারত না অথচ সেই মানুষই আজ পুরো বিশ্বকে নিজ হাতের
মুঠোয় নিয়ে ঘুরছে।হয়তো তেমনই ভাবে কোন একদিন মানুষ তৈরি করবে আ্যান্টিম্যাটার তৈরির সহজ উৎস এবং এগিয়ে যাবে
শক্তির এক নতুন জগতের দিকে............
No comments