স্যাটেলাইট
স্যাটেলাইট
টেলিভিশনে খেলা চলছিল বাংলাদেশের, খুব আগ্রহ সহকারে খেলা
দেখছিলাম। হঠাত্ করে বিদ্যুত্ চলে গেল। সবাই হইচই শুরু করল। আমার মাথায় একটা
প্রশ্ন জাগল যে, আমরা টেলিভিশনে খেলা দেখি খেলাটা হচ্ছে
অনেক দূরে। এতদূর থেকে খেলা কিভাবে আসে? প্রশ্নটি বাবাকে
করলে বাবা উত্তরে বলে আসলে এটা স্যাটেলাইট থেকে আসে। আবার প্রশ্ন করলাম যে
স্যাটেলাইট টা আবার কী? বাবা উত্তরে বলল বড় হলে বুঝবে।
আমি মনে মনে ধারণা করে নিলাম যে মনে হয় স্যাটেলাইট একটা মানুষ যেটা টেলিভিশনের
মধ্যে থাকে এবং আমরা এর মাধ্যমে সবকিছু দেখতে পাই। আস্তে আস্তে জ্ঞান বাড়ল,
বুদ্ধি বাড়ল বুঝতে পারলাম স্যাটেলাইট কী।
প্রথমে স্যাটেলাইটকে আয়না হিসেবে ব্যবহার করে সিগন্যালকে পৃথিবীর একপাশ থেকে অন্যপাশে নিয়ে যাওয়ার ধারণাটি মাথায় এসেছিল লেখক আর্থার সি. ক্লার্ক(১৯১৭-২০০৮) এর মাথায়। তারপর স্যাটেলাইট প্রথম পাঠাল সোভিয়েত ইউনিয়ন(রাশিয়া) ১৯৫৭ সালের ৪ ঠা অক্টোবর যেটার নাম ছিল স্পুটনিক-১(Sputnik-1)।
সাধারণ সংজ্ঞায় স্যাটেলাইট হচ্ছে মানুষের তৈরি এমন একটা মেশিন যেটা পৃথিবীর চারপাশে ঘোরে এবং যোগাযোগ মাধ্যম ও বর্তমান আইসিটি তে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। স্যাটেলাইট সাধারণত বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। যেমন কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট, রিমোট সেন্সিং স্যাটেলাইট, নেভিগেশন স্যাটেলাইট, ওয়েদার স্যাটেলাইট, আরথ্ ওবজারভেশন স্যাটেলাইট, এস্ট্রোনমিকাল স্যাটেলাইট, ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন স্যাটেলাইট ইত্যাদি। এই প্রত্যেকটি স্যাটেলাইটের নিজস্ব কাজ আছে। একটা স্যাটেলাইট এর বিভিন্ন রকম অংশ আছে। সেগুলো হলো ফোল্ড-আউট(যেটা ভাজ হতে পারে) সোলার প্যানেল যেটা স্যাটেলাইট কে শক্তি দেয়, ছোট এবং বড় এন্টেনা থাকে যেগুলো পৃথিবী থেকে সিগন্যল গ্রহণ করে আবার অন্য জায়গায় পাঠিয়ে দেই, মোটর এবং ইঞ্জিনগুলো স্যাটেলাইট কে সবসময় নিজের জায়গায় থাকতে সাহায্য করে, দুই পাশে চারটা সোলার প্যানেল থাকে এবং সেগুলোকে চার্জ দেওযার জন্য সোলার ব্যাটারি থাকে এবং সবশেষে কিছু কন্ট্রোল ইঞ্জিন থাকে যেটা চারপাশে ঘুরতে সাহায্য করে।
সব স্যাটেলাইটকেই রকেটের মাধ্যমে মহাশূন্যে পাঠানো হয়। রকেট সবসময় চেষ্টা করে পূর্ব দিকে যেতে কারণ পৃথিবী যেহেতু পশ্চিম দিক থেকে পূর্ব ঘোরে রকেট এখানে আরো গতি পায়। একটা রকেটের ২৫০৩৯ mph এ গতিবৃদ্ধি করতে হবে যদি পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ বল থেকে বের হতে চায়। একটা ওরবিটে ঘুরতে হলে যেটা পৃথিবী থেকে ২২২২৩ মাইল অথবা ৩৫৭৮৬ কি.মি ওপরে একটা রকেটের ১১৩০০ কি.মি/ঘণ্টা বেগে ঘুরতে হবে। যেই স্যাটেলাইট গুলো ২২২২৩ মাইল দূরে হয় সেগুলোকে ‘জিওস্টেশনারি’ স্যাটেলাইট বলে।
সাধারণত ওয়েদার এবং কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কে এতো দূরত্বে রাখা হয়। আর একটা মজার ব্যাপার হলো স্যাটেলাইটগুলো পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে বিভিন্ন দূরত্বে। দূরত্বের দিক দিয়ে কক্ষপথগুলোকে তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে।১.লোয়ার আর্থ ওরবিট- স্যাটেলাইটগুলো পৃথিবীর খুব কাছে থাকে এবং খুব তাড়াতাড়ি পৃথিবীর চারপাশে ঘোরে ।২. মিডিয়াম আর্থ ওরবিট- স্যাটেলাইটগুলো ২০০০০ কি.মি ওপরে পৃথিবী থেকে এবং চারপাশে ঘুরতে ১২ ঘণ্টা লাগে।৩. হায় আর্থ ওরবিট- এখানে স্যাটেলাইটগুলো একটা নিদির্ষ্ট দূরত্ব ৩৬০০০ কি.মি দূরে থাকে। আর মজার ব্যাপারটি হলো এগুলো সবসময় একই বিন্দুতে থাকে কারণ এটি পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে সময় নেয় ২৪ ঘণ্টা এবং ঠিক একই সময়ই পৃথিবী নিজ অক্ষে ঘুরতে নেয়। এগুলো কে ‘জিওস্টেশনারি’ স্যাটেলাইটও বলে ।
আমাদের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ পাঠানো হয়েছিল ২০১৮ সালের ১১ মে।
এটা
তৈরি করেছিল ‘থেলস এলেনিয়া স্পেস’ এবং এটা ‘স্পেস এক্স’ থেকে ‘ফ্যালকন ৯ ব্লক ৫’ রকেটে পাঠানো হয়েছিল। স্পুটনিক থেকে শুরু করে ৮৩৭৮ স্যাটেলাইট
মহাশূন্যে পাঠানো হয়। যার মধ্যে ৪৯৯৪ স্যাটেলাইট বর্তমানে রয়েছে। ‘ইউ.এস’ এ বর্তমানে সবচেয়ে বেশি স্যাটেলাইট আছে
৮৩০ টি। এভাবেই স্যাটেলাইট বর্তমান বিশ্বকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে উন্নতির পথে।
Nihal
Mirzapur Cadet College
No comments