বিজ্ঞানে আলোড়ণ (Sci-fi)

বিজ্ঞানে আলোড়ণ

 সব্বাই আমাররে গাম্বুস ডাকে! আমার পেটটাকে বন্ধুরা বক্র স্টেডিয়াম বানাইয়া খেলবার চায়।ওরা বোঝেনা, এইটা যে আমার হর্মোনাল প্রবলেম। আর আমার ওজন কী ওত নাকি?মাত্র ৭০ প্লাস। গত তিন বছর ধইরা (১০-১২) এই ৭০ প্লাস এ আছি! ইশ্,এখন আম্মাও কিপ্টুস হয়ে গেছে।এই মোটু ছেলেটাকে খাইবার দেয় না। কয় ডাইট করলে নাকি শুকাইয়া যামু। আজ থেইকা পুরো সকাল,দুপুর মিলে আমার খাবার একটা আম আর হাফ গ্লাস দুধ।রোজ রোজ যেখানে একগাদা ভাত খাইতাম সেখানে এইটুকুনি! নিজেই ঘাবড়াইয়া গেলাম। নতুন রুটিন অনুযায়ী খাবার পাইলাম - 

' আম্মা, এটা আমার?' 

'হুম,খা।'

এই বলে আম্মা কাজে লেগে গেলেন।

'আচ্ছা,আম খাই....'

'হাদারাম কোথাকার! দিয়া আইছি তোর সামনে, খাইবো কী জ্বীন পরী?

'আরে আমি সেটা বলবার চাই নাই।'

'তয় কী?'

'দুধ দেখলে পাশের বাড়ির খালাম্মার  কথা মনে পইড়া যায়। দুধ আনারস একলগে খাইয়া কী অবস্থাই না হইছিল। জিগাইতে চাইছিলাম আম খাইয়া দুধ খাইলে সমস্যা হয় কিনা,পরে ফলারের কথা মনে পইড়া গেছে।'

'না,এইরকম কথা আগে শুনি নাই।'

আম্মার লগে একটু বিটলামি কইরা কইলাম,

'মাই,দুধ আনারস একলগে হইলে কি যুদ্ধ বাঝে?'

'ধুর বোকা।আমি ওত শত বুঝি না'

আমি মোটু হলেই কী? এক দৌড়ে চলে গেলাম মাষ্টর দাদার কাছে।লোকে আমারে খাবার পাগল কয়,কয় বল্টু।তয় তারা জানে না আমি যে বিজ্ঞান পাগল।

'মাষ্টর দাদা,ও মাষ্টর দাদা'

জানালা খুইলা আমার দিকে আড় চোখে চাইয়া আছে - 

'এই ভরদুপুরে কেউ ডাকে নাকি?'

' আরে তুমি বাইর হউ।'

বাইরে এসে বলে -

'কী হইছে?'

'দুধ আনারস একলগে খাইলে কী হয়?'

দাদা মুচকি হাইসা কয়

' এই বদ্দ গ্রামে বিজ্ঞান এখনো তোর মতো পিচ্চি বাচ্চা রে,আমরা যে এখনো বিজ্ঞানরে বড় করবার পাই নাই।তবে তোর এই মাষ্টর দাদার মতে, দুধ আনারস একলগে খাইলে কিছুই হয় না। লোকে কয় বিষক্রিয়া হইয়া মানুষ মইরা যায়।এটা যে পুরা দেশের মানুষের মুখের কথা।তয় কারো কারো গ্যাস, পেট খারাপ হইবার পারে।'

'ও...ও...ও

'হ্যাঁ রে,আমাগর মতো বদ্দ গ্রামে কুসংস্কাররেই যে বিজ্ঞান বানাইয়া ফেলছে।'

'আমরা পারুম এই গ্রামরে ডিজিটাল বানাইতে?'


'পারমু না ক্যাঁন? আয় ঘরে আইয়া ব। মোরে মোর বাপজানে ঢাকা শহর পাঠাইছিল পড়ুনের লাইগা।তখনতেই আমার মন কইত আমার এই গহিনপুর গ্রামটারে ডিজিটাল বানামু,আমার এই গ্রামটা হইব বিজ্ঞানের রাজ্য আর আমার বাড়িটা বিজ্ঞানের রাজ্যের রাজমহল।'

'আচ্ছা দাদা,কী কী থাকব তোমার রাজ্যে?'

'হুমহ্, চল আমার আর্ট পেপারটা তোরে দেখাই।'

এই বইলা মাষ্টর দাদা তার চৌকির ডানপাশের নিচে থাকা বক্স থেইকা একটা ইয়া বড় কাগজ বাইর করলেন।উঠানে গিয়া  মাষ্টর দাদারে ভাঁজ খুলতে দেইখা আমি টাসকি খাইয়া গেছি। মনে হইতাছে মাস্টর দাদা পুরা রাজ্যই আইকা ফেলছে।হঠাৎ মনে হইলো আমি আর

গ্রামে নাই।একি!  আমি তো দেখি দাদার বৈজ্ঞানিক রাজ্যে আছি। চতুর্দিকে শুধু আবিজাবি যন্ত্রপাতি। কিছুই বুঝতে পারতেছি না কোনটা দিয়া কী করমু। আমি সামনে থাকা যন্ত্রটায় টিপাটিপিশুরু করলাম। হঠাৎ দেখি পাশে দাদা।দাদাকে ডাকলাম -

'দাদা,ও দাদা...'

একি! চারপাশ জুড়ে কে যেন চিৎকার করতাছে দাদা ও দাদা! বুঝতে পারলাম এইনে সাউণ্ড বক্স দিয়া কোনো কিছু জোরে বাজানো লাগেনা।এইনে ওইটার জন্য সাইকন বক্স আছে। একটা কথা কইলে তা জোরে জোরে পুনঃধ্বনি হয়।তয় যারে ডাকা হয় আর যে ডাকে সেই শুনবার পায়। এ রাজ্যের সবার কাছেই আছে এটা। আমিও যে এখন এই রাজ্যেরই সদস্য! আমি ঐ যন্ত্রের কথা কেমনে জানলাম? প্রত্যেকটা যন্ত্রেই খুটিনাটি সব লেখা আছে।তয় আজব বৈজ্ঞানিক ভাষায়! ঐ যে কইছিলাম না টিপাটিপি শুরু করছি। হঠাৎ বাংলা আইসা  পড়ছে।পড়তে পড়তে দাদা আইসা  হাজির।

'কিরে?ডাকছিস ক্যাঁন?'

দাদার পায়ে পইরা থাকা যন্ত্রটার দিকে হাঁ কইরা চাইয়া আছি।

আমার চোখের দৃষ্টি আন্তাজ কইরা দাদা কইলেন, 'শোন,এইটা হইলো ' টিম্বার সো', এটা দিয়া তুই যেখানে যাইতে চাইবি সেখানেই যাইতে পারবি।'

'ও!!! আচ্ছা দাদা, আমার তো খিদা লাইগা গেছে। আম্মার দেওয়া আম আর দুধ টাও ফাইলা আইসা পড়ছি।'

'ওরে বোকা,আগে বলবি নে? এইনে খাবারের অভাব আছে নাকি?'

'দাদা, এইখানে খাদ্য তৈরির কারখানা আছে?ঐযে আমাগো গ্রামের ছন্দু চাচা যে ২ টাকার কেক বানায়।'

'নারে,এখানে মানুষের হাতে বানান লাগে না।ঘরে থাইকা 'নিকাস' যন্ত্রে বইসে বইসা ক্লিক করলে ফ্যাক্টরিতে যন্ত্র দিয়াই সব বানানো হয়।আয় তোরে আগে খাউয়াই। পরে তোরে কিমিনিউ দেখামু।'

'আচ্ছা চল।'

'আমরা মিরান রেস্টুরেন্টে আইছি। তুই তোর পকেটে হাত দে। ফোনটা বাইর কইরা দেখ কী খাবি।ওইনে সব ধরণের খাবারের ছবি ও নাম আছে।'

'আরে সত্যিই তো, কিন্তু কীভাবে?'

'ওইনে ঢুকার সাথে সাথে তোর ফোনে লোকেশন সেট হয়ে যা দরকার তা আইসা পড়ছে। যেইটা খাইবি ঐটায় ক্লিক করলে রোবট ( ক্রিত্তিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন) তোরে খাবার দিয়া যাইব।'

খাওয়া শেষ কইরা মাষ্টর দাদারে কইলাম,

'তুমি কী জানি দেখাইবা কি...নি...মি....'

',ঔখানেই ( কিমিনিউ) যাচ্ছি।'

'আচ্ছা দাদা,ঔটা কি তোমার রাজ্যের রাজমহল

'হ্যাঁ রে, তোর তো দেখি সেই বুদ্ধি। কিমিনিউ এর কথা ধারণা করতে পারলি।'

উপস্থিত হইলাম সুপার পাওয়ার হাউজের ( কিমিনিউ) সামনে। গেইটের সামনে যাইতেই দরজা খুইলা গেল।ঘরে ঢুকে ডিজিটাল ঘড়ির দিকে চাইয়া দেখি রাত ১০ টা বাজে। আমাগো খেয়ালি নাই, কখ জানি রাত হইয়া গেছে।দাদা আর আমি ঘুমাইয়া গেলাম ইলেকট্রিক বেডে।

পরদিন দাদা তার একটা গোপন বক্স নিয়া আইল।দাদার স্পর্শে লক খুইলা গেল।একের পর এক স্পর্শ করে যাচ্ছেন দাদা।আমি নিতান্তই অবাক হইতাছি!

 হঠাৎ শব্দ শুনতে পাইতেছি।তবে বুঝতে পারছিনা কী।অস্পষ্ট কিছু কথা শুনতে পারতেছি।সেই শব্দ আস্তে আস্তে আরো বেড়ে যাচ্ছে।একি,আমি আর সহ্য করতে পারতেছি না। দাদাকে চিৎকার করে ডাকতেছি, 'দাদা.....ও দাদা..... '

 আমি ফিইরা আসলাম আবার আমার গহিনপুর গ্রামে। আবছা আবছামনে পড়ছে সবকিছু। পাশে দাদা মুচকি হাসছে, 'কিরেশুনতে পারছিলি কিছু? এযে বিজ্ঞান, এ প্রযুক্তির চিৎকার, আর্তনাদ।আমরা যে তারে ঐ পেপারেই বন্দি কইরা রাখছি। বাস্তবতয় আনবার পাইতাছি না!!!'


 

 লিখেছেনঃ

নুসাইবা নুসরাত সম্প্রীতি

 বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ময়মনসিংহ


No comments

Theme images by dino4. Powered by Blogger.