প্রোটিনের জীবন যাত্রা

প্রোটিনের জীবন যাত্রা

 

প্রোটিন হলো জীবজগতের চাবিকাঠি। এটি বাদ দিয়ে জীবনকে কল্পনা করা যায় না। 

প্রোটিন কথাটি গ্রীক শব্দপ্রোটোশথেকে এসেছে। শব্দটির অর্থ হলোআমার স্থান আগেপ্রোটিন মূলত কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন ও নাইট্রোজেনের সমন্বয়ে গঠিত যৌগ হলেও এতে ফসফরাস, সালফার, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, যুক্ত থাকতে পারে। প্রোটিনের আণবিক ওজন ১০ থেকে ১০এবং অসংখ্য পরমাণু মিলেমিশে প্রোটিনের একটা অণু সৃষ্টি করে। উদাহরনস্বরূপ বলা যায়, আমাদের রক্তে উপস্থিত হিমোগ্লোবিনের এক অণু প্রোটিন সৃষ্টিতে ৯৫১২টি পরমাণু দরকার হয়। এসিড, ক্ষার অথবা উৎকোচকের প্রয়োগে প্রোটিন পানি বিশ্লেষিত হয়ে অ্যামাইনো এসিড সৃষ্টি করে। ২২ রকমের অ্যামাইনো এসিড আসে। একাধিক অ্যামাইনো এসিডের সমন্বয়ে প্রথমে পলিপেপটাইড ও তা থেকে এক একটি প্রোটিন তৈরি করে।


একটি অ্যামাইনো এসিডের কেন্দ্রে থাকে কার্বন পরমাণু। এই কার্বনের একদিকে অ্যামাইনো গ্রূপ ও অপরদিকে কার্বক্সিল গ্রুপ যোজক দ্বারা যুক্ত হয়। একটি ডাই-পেপটাইড যোজক দুটি অ্যামাইনো এসিডকে যুক্ত করে। এইভাবে একাধিক অ্যামাইনো এসিড যুক্ত হয়ে তৈরি হয় পলিপেপটাইড। একটি বা একাধিক পলিপেপটাইড শিকল দিয়ে তৈরি হয় এক একটি প্রোটিন। আমাদের রক্ত্র উপস্থিত হিমোগ্লোবিন চারটি পলিপেপটাইড দিয়ে তৈরি। 

        প্রোটিন অণুতে অ্যামাইনো এসিডগুলো সজ্জাবিন্যাসের উপর প্রোটিনের বৈশিষ্ট্য আংশিকভাবে নির্ভরশীল। সজ্জাবিন্যাসের রকমফের যত বেশি হয়, প্রোটিনের বৈশিষ্ট্যও তত ভিন্ন হয়। তুলনাস্বরূপ, ইংলিশ বর্ণমালার ২৬টি অক্ষরকে অর্থবহভাবে সাজাতে যেমন অজস্র শব্দ তৈরি করা যায়, তেমনিই ২২টি অ্যামাইনো এসিড নানাভাবে সজ্জিত করলে নানারকম প্রোটিন পাওয়া যায়। 

        প্রোটিন তৈরিতে জিনেরও একটা ভুমিকা আছে। জিনের মধ্যে যে DNA থাকে তার থেকে তৈরি হয় RNADNA-এর প্রধান উপাদান হলো ৪টি বেস। যথাঃ- অ্যাডেনিন(A), গুয়ানিন(G), সাইটোসিন(C), থাইমন(T)RNA, DNA এর অংশ হলেও এতে থাইমন থাকে না। তার বদলে থাকে ইউরাসিল(U)

        অ্যামাইনো এসিড নানাভাবে সজ্জিত হয়ে নানারকম প্রোটিন তৈরি করলেও চুলের প্রোটিন এবং হৃদপিণ্ডের প্রাচীরের প্রোটিন তো এক নয়, এখন কোন অ্যামাইনো এসিড কিভাবে সজ্জিত হয়ে কি প্রোটিন গঠন করবে তা কে বলে দেবে? এই বার্তা বহন করার কাজটিই করে বার্তাবাহক RNAব্যাপারটা একটু খুলে বলি, RNAতে যে বেসগুলো থাকে তাদের তিনটি করে একসাথে মিলে একটা কোড তৈরি করে। যেমন-অ্যাডোনিন, ইউরোসিল ও গুয়ানিন মিলে তৈরি করে AUG কোড। এই কোডটি মিথাইলনিন নামক প্রোটিন তৈরি করার বার্তা বহন করে। প্রত্যেকটি কোডের আবার নির্দিষ্ট অ্যান্টি কোড থাকে। এই অ্যান্টিকোডই কোডটিকে নিয়ে অ্যামাইনো এসিডের সঙ্গে জুড়ে দেয়।আর তারপরই অ্যামাইনো এসিডগুলো তৈরি করে পলিপেপটাইড এই পলিপেপটাইড থেকেই তৈরি হয় প্রোটিন। 

        আমরা সবাই প্রায় বিবর্তন সম্পর্কে জানি। বিবর্তনকে নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই। কিছু বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই পৃথিবীর সকল জীবই একটি আদিম কোষ থেকে এসেছে। তাই এটা প্রমান করতে বিজ্ঞানীরা লেগে পরল। সৃষ্টির প্রাথমিক দিকে পৃথিবী ছিল উষ্ণ। সেই সময় ছিল হাইড্রজেন-সালফাইড, অ্যামাইনো-গ্যাসের ও পানি ছড়াছড়ি। এই পানি, সালফার, অ্যামাইনো বিক্রিয়া করলে হয় অ্যামাইনো এসিড যা দ্বারা প্রোটিন হয়। 

        কিন্তু প্রোটিন তো সব না। আদিম দুনিয়ায় সৃষ্টি হলো প্রোটিন, হলো RNAকিন্তু আখন পরিপুরন জীবন বিজ্ঞানিরা প্রমান করতে পারেনি। জীবন হওয়ার জন্য দরকার চর্বিযুক্ত আবরণ যা বিজ্ঞানিরা পেয়েছিল সমুদ্রের ঢেউএর ফেনায়। যেখানে থাকে ফ্যাটি-এসিড। 

        RNA, অ্যামাইনো-এসিড রাইবোসোম, কোষ আবরণ সবই হলো। বিশাল মহাসমুদ্রের কোন এক প্রান্তে আমাইন-এসিড, রাইবোসোম, ফ্যাটি-এসিডের দ্বিস্তরী আবরণ ও RNA একসাথে মিলে একটা ক্ষুদ্র অণু তৈরি করে যার নাম হয় কোষ। এই কোষের সাথে  আমাদের বর্তমান কোষের হয়ত খুব বেশি মিল নেই। কিন্তু হয়তবা এইভাবে শুরু হয়েছে জীবন সৃষ্টি হওয়া।

 

লিখেছেন,

Farden Hossain Shishir

Narinda Govt. High School


 

 


No comments

Theme images by dino4. Powered by Blogger.