ইন্টারস্টেলার বিজ্ঞান

ইন্টারস্টেলার বিজ্ঞান




৭ নভেম্বর, ২০১৪ তারিখে বিশ্বব্যাপী মুক্তি পেয়েছে সায়েন্স ফিকশন মুভি Interstellar। মুভির পরিচালক ক্রিস্টোফার নোলান গল্পের ভেতর বিজ্ঞানের বিষয়গুলো সত্যের কাছাকাছি রাখতে বিখ্যাত পদার্থবিদ কিপ থর্নের পরামর্শ নিয়েছেন। কিপ থর্ন এই মুভির বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাগুলোকে নির্ভুল করতে সাহায্য করেছেন, মুভিতে যেন গল্পের প্রয়োজনে যা ইচ্ছে তাই গাঁজাখুরি না দেখানো হয় সেটা নিশ্চিত করতে তিনি সজাগ ছিলেন।


ইন্টারস্টেলার মুভির গল্প একদল মহাকাশচারীর দূরতম ছায়াপথে ভ্রমণকে কেন্দ্র করে। এই বিশাল দূরত্ব অতিক্রম করতে তারা একটি কীট-গহ্বর বা wormhole-এর ভেতর দিয়ে ভ্রমণ করে। সৌরজগত থেকে কয়েক বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের এক অতিপ্রকাণ্ড কৃষ্ণ-গহ্বরের (Supermassive Black Hole) কাছে মুহূর্তেই তারা পৌঁছে যায়। এই লেখাটিতে কীট-গহ্বর, কৃষ্ণ-গহ্বর ও অন্যান্য বিষয়কে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।




উপরের ছবিতে গারগ্যানচুয়ার একাংশ দেখা যাচ্ছে। সিনেমায় কৃষ্ণ-গহ্বরের পরিবেশন এর আগে এতোটা নিখুঁতভাবে করা হয় নি। কৃষ্ণ-গহ্বরের মধ্যে SMBH শ্রেণীর গহ্বরগুলো সবচেয়ে বড় হয়ে থাকে। ধরে নেয়া হয় যে প্রতিটি গ্যালাক্সির কেন্দ্রেই একটি করে SMBH আছে। অতিপ্রকাণ্ড কৃষ্ণগহ্বরের উদ্ভব নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে।






আপেক্ষিকতার জগাখিচুড়ি!




সিনেমার অনন্য একটি সিকোয়েন্স ছিল সময়ের আপেক্ষিকতার প্রয়োগ। গারগ্যানচুয়ার কাছাকাছির ঘূর্ণায়মান গ্রহটির ওপর যে পরিমাণ মাধ্যাকর্ষণ বল কাজ করছিল, তার প্রভাবে গ্রহটিতে সময় অত্যন্ত ধীরে চলছিল। এই বলের প্রভাবের বাইরের অঞ্চলে সময় চলছিল পৃথিবী বা অন্য সব স্থানের সময়ের গতিতে। এজন্য গ্রহটিতে কাটানো এক ঘন্টা মাধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাবের বাইরে ৭ বছরের সমান!


কৃষ্ণ-গহ্বর আর কীট-গহ্বর বানায় কীভাবে?


কৃষ্ণ-গহ্বর আর কীট-গহ্বর কীভাবে তৈরি হয়, তা জানার আগে দু’টা ছোট সংজ্ঞা জেনে নেই।




কৃষ্ণ-গহ্বরঃ




কোন ভরই স্থান-কালের ওপর বক্রতা সৃষ্টি করে, যেন স্থান-কাল কোন বিছানার চাদর, আর ভরবস্তুটি সেই চাদরের ওপর একটা টেনিস বল। এই বক্রতার পরিমাণ নির্ভর করে বস্তুর ভর ও ঘনত্বের ওপর। যদি কোন বিন্দুতে প্রকাণ্ড একটি ভর জড়ো করা যায়, তাহলে সেখানে একটি সিঙ্গুলারিটি সৃষ্টি হয়। একটি বস্তু সিঙ্গুলারিটির দিকে রওনা দেয়ার পর একটা নির্দিষ্ট দূরত্বের পরে আর ফিরে আসতে পারে না। কৃষ্ণ-গহ্বরের ভেতরে এই জায়গাটিকে ইভেন্ট হরাইজোন বলা হয়।


কীট-গহ্বরঃ




প্রতিটি কৃষ্ণ-গহ্বরের ভেতরেই একটি সিঙ্গুলারিটি বিন্দু থাকে। এমন দুটো কৃষ্ণ-গহ্বরের সিঙ্গুলারিটি বিন্দু দুটিকে যদি মিলিয়ে দেয়া যায়, তাহলে যে সুড়ঙ্গের সৃষ্টি হয়, তাকে কীট-গহ্বর বা wormhole বলে। পরষ্পর কোটি কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত এমন দুইটি কৃষ্ণ-গহ্বরকে মিলিয়ে কীট-গহ্বর সৃষ্টি হয়। যদিও প্রাকৃতিক নিয়মে নিজে নিজে এগুলো তৈরি হতে পারে না। পঞ্চম বা তার অধিক মাত্রার প্রাণীরা মাধ্যাকর্ষণকে ইচ্ছামতো নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তাদের কাছে মাধ্যাকর্ষণ বল দৈর্ঘ্য-প্রস্থ-উচ্চতার মতোই একটি মাত্রা। তাই তারা অতি সহজেই কৃষ্ণ-গহ্বর তৈরি করতে পারবে। Bulk এর ভেতরে দুটো কৃষ্ণ-গহ্বরকে মিলিয়ে এমন কীট-গহ্বরও তৈরি করতে পারবে। কীট-গহ্বরের এক মুখ থেকে আরেক মুখের দূরত্ব বাস্তবে কোটি কোটি বিলিয়ন আলোকবর্ষ হলেও এই সুড়ঙ্গ ব্যবহার করে নিমিষেই সেই পথ পাড়ি দেয়া সম্ভব।





লিখেছেন,
Atif Abchar
Govt. Muslim High School

No comments

Theme images by dino4. Powered by Blogger.