অটোফেজি

অটোফেজি

অটোফেজি প্রক্রিয়াটা আসলে কী?
 
আত্মভক্ষণ  বা অটোফেজি বা অটোফেজেসাইটোসিস হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যা অভ্যন্তরীণ অঙ্গসমূহকে কোষীয় পর্যায়ে পরিষ্কার করে। অটোফেজি শব্দটির উৎপত্তি প্রাচীন গ্রীক শব্দ autopayog অটোফেজোস এবং kuToG কাইটোস থেকে। শরীরের বিভিন্ন কাজ করার জন্য প্রোটিনের গঠনটি অ্যামিনো এসিড দ্বারা ত্রিমাত্রিক হতে হয়। যদি ত্রিমাত্রিক না হয় তবে প্রোটিনটি শরীরের জন্য ক্ষতিকারক ও নানা রোগের সৃষ্টি করবে।



মুসলিম রোজা রাখলে বলা হয় 'সিয়াম'।  খ্রিষ্টানরা রোজা রাখলে বলা হয় 'ফাস্টিং'। হিন্দু বা বৌদ্ধরা রোজা রাখলে বলা হয় 'উপবাস'। বিপ্লবীরা রোজা রাখলে তকে বলা হয় 'অনশন'। আর মেডিকেল সাইন্সে একে বলা হয় ' অটোফেজি'।

অটোফেজি প্যাথোজেন,  ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদি জীবাণুকে ধ্বংস করে দেহকে সুস্থ রাখে। আসলে এ হলো কোষের আর্বজনা পরিচ্ছন্নকরণ প্রক্রিয়া। কোষের কার্যক্ষমতা ঠিক রাখতে এই প্রক্রিয়ার কোনো বিকল্প নেই।এই অটোফেজি বিভিন্ন প্রদাহ এমনকি হৃদরোগ ও ক্যান্সার না হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।আলঝেইমার বা পারকিনসস্ন জাতীয় বয়সজনিত রোগগুলো যে কারণে হয় তার প্রতিরোধও করে অটোফেজি। সক্রিয় অটোফেজি ব্যবস্থা মস্তিষ্ককে ক্ষুরধার হতেও সাহায্য করে।

ক্যান্সার নিয়ে দীর্ঘ গবেষণা করেছেন এমন একজন বিজ্ঞানী টমাস সেফ্রেইড। প্রাকৃতিক ভাবে ক্যান্সার প্রতিরোধ নিয়েই তার গবেষণ।  তিনি দেখেন বছরে কেউ যদি অন্তত একবারও সাতদিন একটানা  উপবাস থাকতে পারে ( পানি ছাড়া অন্যকিছু না খেয়ে) দেহ পরিচ্ছন্ন করার জন্য তার আর কিছু লাগেনা। ভবিষ্যতে ক্যান্সার হতে পারে এমন সেলগুলো এ প্রক্রিয়ায় পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। এমনকি এটা সাতদিন না হয়ে চারদিনও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বছরে কয়েকবার উপোস করতে হবে।

সাধারণভাবে উপবাসের ১৮তম ঘণ্টা থেকে অটোফেজি সক্রিয় হয়। কোনো কোনো গবেষণায় অবশ্য দেখা গেছে যে ১৩তম ঘণ্টা থেকেও অটোফেজি সক্রিয় হয়েছ।  কাজেই আমরা বলতে পারি যে, উপবাসের ১৩-১৮ ঘণ্টায় গিয়ে আমাদের দেহে অটোফেজি প্রক্রিয়া সক্রিয় হয়। কোষের আর্বজনা ও ক্ষয়ে যাওয়া কোষ রিসাইক্লিং এবং নতুন কোষাণু তৈরি ও শক্তি উৎপাদন শুরু হয়।

১৯৬০ সালে বিজ্ঞানীরা প্রথম দেখতে পান কোষ কীভাবে নিজের ভিতরে একটি বস্তার মতো ঝিল্লি তৈরি করে নিজের আবর্জনা বা ক্ষতিগ্রস্ত উপাদানকে তার ভিতরে আটকে ফেলে। বেলজিয়ামের বিজ্ঞানী ক্রিস্টিয়ান ১৯৭৪ সালে এ লাইসোজোম আবিষ্কারের  কারণে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন।  তবে সেখানে ঠিক কী ঘটে বিজ্ঞানীরা তা জানত না।

জাপানের অটোফেজি গবেষক ইয়োশিনারি ওহশোমি পৃথিবীতে সর্ব প্রথম অটোফেজি নিয়ে কাজ শুরু করেন। তিনি লক্ষ্য করেন লাইসোজোম শুধু দেহের আর্বজনা বা ক্ষতিগ্রস্ত উপাদান জমা রাখেনা। বরং নবায়নযোগ্য শক্তি হিসেবে কাজ করে নতুন কোষ তৈরি করে। ইয়োশিনারি দেখিয়েছেন, কোষেরা নিজেরাই নিজেদের বর্জিতাংশ বা আর্বজনাকে আটকায় এবং সেখান থেকে উপকারী উপাদানগুলো ছেঁকে আলাদা করে ও সেই উপাদানগুলো দিয়ে শক্তি উৎপাদন বা অনেক নতুন কোষ সৃষ্টি করে।  এ মহৎ কাজ তাঁকে ২০১৬ সালে নোবেল পুরষ্কার এনে দেয়।       

রোজা বা 'সিয়াম' এভাবেই আামাদের দেহের সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।



লিখেছেনঃ

Shahrin Khondker

BAF Shaheen College Kurmitola





No comments

Theme images by dino4. Powered by Blogger.