সম্ভাবনার জগত-৩/কন্ডিশনাল প্রবাবিলিটি




সম্ভাবনার জগত-৩/কন্ডিশনাল প্রবাবিলিটি

সমস্যাঃতোমার কাছে একটি বাটিতে ৬টি লাল ও ৫টি নীল বল আছে।তুমি কিছু না দেখে দুটি বল তুললে,প্রথমটি লাল ও দ্বিতীয়টি নীল হওয়ার সম্ভাবনা কত?
ভুল উত্তরঃপ্রথমটি তুললে সেটি লাল হওয়ার সম্ভাবনা ৬/১১দ্বিতীয়টি নীল হওয়ার সম্ভাবনা ৫/১১সুতরাং উত্তর হবে,(৬/১১)*(৫/১১) =৩০/১২১

যদি আমরা প্রথম বল তুলে সেটি আবার ফেরত রাখতাম তাহলে এই উত্তরটি ঠিক ছিল।তবে বুঝতেই পারছো এখানে সেরকম কিছু হয়নি।তাই হিসাব বদলে যাবে।
সঠিক উত্তরঃপ্রথমটি তুললে সেটি লাল হওয়ার সম্ভাবনা ৬/১১এবার ১টি কার্ড বাটিতে কমে যাওয়ায় কার্ডের সংখ্যা ১০।সুতরাং দ্বিতীয়টি নীল হওয়ার সম্ভাবনা ৫/১০তাই উত্তর হবে (৬/১১)*(৫/১০) = ৩/১১
ভুল সমাধানে আমরা কি আমরা মূলত কি করেছিলাম?আমরা বের করেছিলাম দ্বিতীয়টি নীল হওয়ার সম্ভাবনা কত,সেটা।কিন্তু আমরা একটা শর্ত ভুলে গিয়েছিলাম,তা হলো “প্রথমটি লাল হওয়ার সাপেক্ষে”।
এরকম শর্ত অনুসারে কোন ঘটনার সম্ভাবনা বের করাকেই বলে কন্ডিশনাল প্রবাবিলিটি(কন্ডিশনাল সম্ভাব্যতা)।যদি কোন ঘটনা হয় A আর শর্তের ঘটনাটি হয় B,তাহলে কন্ডিশনাল সম্ভাবনা হয় P(AB),একে পড়া হয় “Probability of A given B”.

সম্ভাব্যতার বিভিন্ন শাখার মাঝে একটি হলো এই কন্ডিশনাল সম্ভাব্যতা।সম্ভাব্যতা জিনিসটার বাস্তব জীবনে যে বহু প্রয়োগ রয়েছে,তা বার বারই বলে এসেছি।নিচের সমস্যাটি দেখলে তা আরো ভালভাবে বুঝতে পারবে।

সমস্যাঃধরো,তুমি স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা দিয়েছো।প্রশ্ন কঠিন হওয়ায় তোমার স্যার জানেন যে,তোমাদের মাঝে মাত্র ৩০% ছাত্র পরীক্ষায় পাস করতে পারবে।তোমাদের স্কুল আবার অনেক আধুনিক।বিশেষ যন্ত্র দ্বারা পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করা হয়।কিন্তু সমস্যা হল,যন্ত্রটি ৮০ ভাগ সময় সঠিক উত্তর,অর্থাৎ কে পাস আর কে ফেল তা সঠিকভাবে জানালেও,বাকি ২০ ভাগ সময় ভুল করে ফেল করা ছাত্রদেরও পাস করিয়ে দেয়।পরীক্ষার রেজাল্টের দিন দেখা গেল তুমি পাস করেছো।এখন প্রশ্ন হচ্ছে,তুমি যে আসলেই পাস করেছো,তার সম্ভাবনা কত?(যেহেতু যন্ত্রের ভুলেও তোমার পাস করার সম্ভাবনা আছে)।

উত্তরঃতোমার পাস করার সম্ভাবনাকে ঘটনাকে আমরা ধরি A,আর আর রেজাল্টের পর পাস করার ঘটনাকে ধরি B
তাহলে আমাদের কী বের করতে হবে?আমাদের বের করতে হবে P(AB)অর্থাত,আমাদের এখন তোমার পাসটা B এর শর্তসাপেক্ষে তোমার পাস’টা “আসল পাস” হওয়ার সম্ভাবনা কত তা বের করতে হবে।
এখন P(A)=30%,যেহেতু তোমার স্যার জানেন,প্রতি ১০০ জনের মাঝে কেবল ৩০ জনের পাস করার সক্ষমতা আছে।

আমাদের এখন P(B) বের করতে হবে।
লক্ষ্য করো,এখানে দুইটা কেস আছে।
কেস-১.তুমি সত্যি সত্যি পাস করেছো।
কেস-২.তুমি যন্ত্রের কারসাজিতে পাস করে গিয়েছো।

প্রথমে কেস ১ দেখো,তুমি যে সত্যি সত্যি পাস করে থাকো তার মানে কিন্তু এই নয় তুমি ক্লাসের ৩০ ভাগ ছাত্রের একজন।কেননা যন্ত্র শতভাগ সময় সঠিক উত্তর দেয় না,দেয় ৮০ ভাগ সময়।তাই সত্যি সত্যি ক্লাসের ৩০ ভাগ ছাত্রের পাস করার কথা থাকলেও পাস করবে আসলে ৩০=২৪% ছাত্র।
এবার কেস-২ লক্ষ্য করো,এখানে ফেল করা ছাত্ররা পাস করে যাবে,কিন্তু বেচারা পাস করা ছাত্ররা ফেলই থেকে যাবে।

তোমার স্যারের মতে,যদি ৩০% ছাত্র পাস করে তাহলে ফেল করবে বাকি ৭০%ছাত্র।এর ২০% হলো ১৪% ছাত্র।
তাহলে এখন বলো,মোট কতভাগ ছাত্র পাস করলো?(২৪%+১৪%)=২৮%।
তাহলে P(AB)=(২৮%/২৮%) =.৮৫৭ বা ৮৬%।
P(AB)=(মুলত এরকম যে,তিমি সত্যি সত্যি পাস করেছো সে সম্ভাবনা/যেভাবেই হোক তুমি পাস করেছো সে সম্ভাবনা)
তাহলে দিনশেষে তুমি যদি পাস করেই যাও,তাহলে আমরা বলতে পারব,তুমি সত্যি সত্যি পাস করেছো এরূপ সম্ভাবনা ৮৬%।


ভাগ্য ভালো,বাংলাদেশের কোন স্কুলে এখনো পর্যন্ত এরকম কোন যন্ত্র দিয়ে খাতা মূল্যায়ন করা হয় না,নইলে কি অসুবিধা (সাথে কিছু সুবিধাও) হত তা দেখতেই পারছো!


1 comment:

Theme images by dino4. Powered by Blogger.