দ্য জার্নি অফ উন্সারটাইনটি"


দ্য জার্নি অফ উন্সারটাইনটি"

১.
"মহামান্য জেভেনা,আপনি কি রেডি?"
মহামান্য জেভেনা নামক ব্যক্তিটি শেষবারের মত চারপাশ তাকিয়ে,একবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,"রেডি।"
"তাহলে এবার চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়ুন"
তিনি চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়লেন।
মহামান্য জেভেনা,আর মাত্র কয়েক মুহুর্ত, এরপর আমি ৩ থেকে ১ গুনব এবং আপনি যাত্রা শুরু করবেন এক অনিশ্চয়তার উদ্দেশ্যে।"
কম্পিউটার 772 এক্স থেকে ঘোষণা এল...থ্রি...টু...ওয়ান...
খুব ধীরে মহামান্য মহামান্য জেভেনার শরীরটি একটি স্বচ্ছ কাচেঁর ঢাকনা দিয়ে ডেকে গেল।
আর তা দেখে সারা পৃথিবীর মানুষ চাপা স্বরে আৎকে উঠল,যা শোনার ক্ষমতা ইতিমদ্ধে মহামান্য জেভেনা হারিয়ে ফেলেছেন।
২.
মহামান্য জেভেনা।
বর্তমান বিশ্বের বিজ্ঞান কাউন্সিলের সভাপতি।
৪২৮০২ সালে আবিষ্কৃত তার স্লিপিং ক্যাপসুল আগে-পিছে কয়েক হাজার বছরের মধ্যে শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার বলে গণ্য।
 এই স্লিপিং ক্যাপসুল ব্যবহার করে মানুষ ঘুমে যেতে পারে ১০ থেকে ১০০ বছরের জন্য। ঘুমানোর সময় তার সকল শরীরবৃত্তীয় কাজ নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হয়।আর নির্ধারিত সময়ে আপনাআপনি সক্রিয় হয়ে ওঠে ব্যক্তির ফুসফুস, হূৎপিণ্ড,শ্বসন প্রক্রিয়া  ইত্যাদি। ফলে জাগ্রত হয় সে।
 যার ফলে ২৩ বছরের তরুণও ১০০ বছর পরও থেকে যায়২৩ বছরের তরুণই, শিশু থেকে যায় শিশু, বৃদ্ধ বৃদ্ধই। 
রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে যান মহামান্য জেভেনা।বিজ্ঞান কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক থেকে হয়ে যান সভাপতি।
 কিন্তু খুব বেশিদিন এভাবে কাটলো না।১০ বছরের মাথায় পৃথিবীর সর্বোচ্চ আদালত স্লিপিং ক্যাপসুলের ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করল। আদালত কারণ দর্শানো এই বলে যে,গত ৯ বছর সারা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ১১ শতাংশ মানুষ স্লিপিং ক্যাপসুল ব্যবহার করে ঘুমিয়ে পড়েছ। দিন যত যাচ্ছে ততই সহজলভ্য হচ্ছে স্লিমিং ক্যাপসুল আর ঘুমিয়ে পড়া মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে।
 যার ফলে সরকারি বিভিন্ন দপ্তর,বিজ্ঞান কাউন্সিল থেকে শুরু করে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ স্লিপিং ক্যাপসুল ব্যবহার করে ঘুমিয়ে পড়েছে, আর মুখ থুবরে পড়েছে সকল কার্যক্রম। তাই সবদিক বিবেচনা করে আদালত নিষিদ্ধ করে দেয় স্লিপিং ক্যাপসুল।
 এরপর আপিল-রায়-আপিল অনেক হয়েছে। কিন্তু তবুও স্লিপিং ক্যাপসুল ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞা আদালত তুলে নেয়নি। যার ফলে আদালতে বিজ্ঞান কাউন্সিলের যৌথ মিটিং শেষে ৪২৮১২ সালের ২৮ আগস্ট স্লিপিং ক্যাপসুলে ঘুমন্ত সকল মানুষকে বিশেষ জরুরি অবস্থা জারি করে জাগ্রত করা হয়।
কিন্তু স্লিপিং ক্যাপসুল পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা  হলেও  মহামান্য জীবনের বিশেষ অনুরোধে আদালত তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী শুধুমাত্র জীবনে একবার তাকে স্লিপিং ক্যাপসুল ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে বিশেষ রুল জারি করে।
 সাধারণ স্লিপিং ক্যাপসুল গুলো১০ থেকে ১০০ বছর পর্যন্ত ঘুমিয়ে রাখতে সক্ষম হলেও,মহামান্য জেভেনা ১ বছর অক্লান্ত  পরিশ্রম করে নিজের জন্য এমন এক স্লিপিং ক্যাপসুল বানান যা তাঁকে ৪৯ হাজার বছর পর জাগ্রত করবে।তার লক্ষ্য একটাই,৪৯ হাজার বছর পরের পৃথিবী দেখা,কীরকম হবে সেই পৃথিবী,শুধু এটুকুর জন্য।
অবশেষে ৪২৮১৩ সালের ৩ মার্চ,মহামান্য জেভেনার শরীর কম্পিউটার 772 এক্স নিষ্ক্রিয় করে দেয় এবং তিনি যাত্রা শুরু করেন ৪৯ হাজার বছর পরের পৃথিবীর দিকে,যা পৃথিবীবাসীর কাছে অনিশ্চয়তার যাত্রা বলে পরিচিত।
৩.
৬২৮০২ সাল।
"মহামান্য ফ্রেব,আমরা কি যাত্রা শুরু করব"
মহামান্য ফ্রেব বললেন,"ইয়েস,লেটস গো"
৪.
 খুব ধীরে ধীরে স্বচ্ছ কাঁচের ঢাকনাটা খুলে গেল ঠিক যেভাবে ৪৯ হাজার বছর আগে ঢাকনাটা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
 মহামান্য জীবনের অঙ্গ গুলো আস্তে আস্তে সক্রিয় হতে থাকলো এবং একসময় তার চোখের পাতা খুলে গেল।
 ৪৯ হাজার বছর পর!
 মহামান্য জেভেনার কাছে মনে হল, কি ব্যাপার, একটু আগেই না শুয়ে পড়লাম। যদিও তিনি ভাল করেই বুঝতে পারছেন,আসলেই অনেক সময় পার হয়েছে।
 মহামান্য জেভেনা লক্ষ্য করলেন,তিনি এক অন্ধকার রুমে শুয়ে আছেন।পুরোপুরি অন্ধকার বলা যাবে না, কারণচারপাশের যন্ত্রগুলো তিনি ভালো করেই দেখতে পারছেন তবে আবছা আবছা।
 এমন সময় তার পাশ থেকে একটি যন্ত্রের মত কি যেন তার চোখের সামনে বেরিয়ে এল আর তার চোখের সামনে 3D স্ক্রিন ভেসে উঠল।তিনি সামান্য অবাক হলেন,কারণ এমন কিছু তো হওয়ার কথা ছিল না।
 "মহামান্য জেভেনা,আপনাকে স্বাগতম" 
মহামান্য জেভেনা দেখলেন,স্ক্রিনে কোট টাই পরা এক ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে। তিনি মনোযোগ দিয়ে তার কথা শুনতে লাগলেন।
"মহামান্য জেভেনা, আপনি যদি আমার কথা শুনে থাকেন তাহলে ধরে নেব ৪৯ বছর পর আপনি আজ কিছুক্ষণ আগে জাগ্রত হয়েছেন।"
 "প্রথমে আমার পরিচয় জানাই।
আমি মহামান্য ফ্রেব।বর্তমান সময়ের বিজ্ঞান কাউন্সিলের সভাপতি।বর্তমান সময় বলতে ৬২৮০২ সালকে বোঝাচ্ছি।অর্থাৎ আপনি ঘুমিয়ে পড়ার প্রায় ২০ হাজার বছর পর এবং আপনি যখন এ বক্তব্য শুনছেন তার থেকে প্রায় ৩০হাজার আগে এই বক্তব্য ধারণ করা হয়েছে।"
মূল প্রসঙ্গে আসি।
"আপনি ঘুমানোর ১০ হাজার বছরের মাথায় পৃথিবীর প্রায় ৯৩ শতাংশ প্রাকৃতিক সম্পদ শেষ হয়ে যায়,আর পৃথিবীর মোট ভূভাগেত মাত্র ২.৫ শতাংশ বনাঞ্চল অবশিষ্ট থাকে।কারণটা আপনার কাছে কঠিন ঠেকার কথা না,বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা মানুষকে অনেক দিয়েছে,ফলে সে হয়ে পড়েছিল লোভী এবং কোন পিছুটান অনুভব করার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলে আর অতি শীঘ্রই ভয়াবহ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়।"
"১৫ হাজার বছরের মাথায় পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদ পুরোপুরি এবং অতি অল্প পরিমাণ বনভূমি থেকে নির্গত অক্সিজেন ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ অক্সিজেন কৃতিম উপায়ে উৎপাদন করা হয়,যস দিয়ে মানুষ তার নূন্যতম চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়।"
"কিন্তু ২০ হাজার বছরের মাথায় এসে পৃথিবী পুরোপুরি ভাবে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।এমন সময় নির্মমভাবে পৃথিবীর অর্ধেক জনসংখ্যাকে নির্মূল (হত্যা) করা হয় এবং বাকি অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে বহন করতে সক্ষম এমন এক মহাকাশযান নির্মাণ শুরু হয়"
"অবশেষে ৬২৮০২ সালে মানবজাতি পৃথিবীকে বিদায় জানিয়ে যাত্রা শুরু করে অনিশ্চয়তার দিকে,আমরা জানতাম না আমরা কোথায়,কোন গ্যালাক্সির কোন গ্রহে বসতি স্থাপন করব এবং পৃথিবীর এই চরম বিপর্যয়ের সময় বিজ্ঞান কাউন্সিলের সভাপতি ছিলাম আমি মহামান্য ফ্রেব।"
"আপনি আজ থেকে ২০ হাজার বছর আগে ঘুমিয়ে পড়ার সময়ই জানিয়ে দিয়েছিলেন,আপনি ৪৯ হাজার বছর পরের পৃথিবী দেখতে চান,তাই আমরা আপনার মতামতকে শ্রদ্ধা জানিয়ে আপনাকে আর জাগ্রত করিনি"
"আপনি যখন এই বক্তব্য শুনছেন,ততদিনে আমাদের যাত্রার প্রায় ৩০ হাজার পেরিয়ে গেছে।নিঃসন্দেহে আমি এখন বেচেঁ নেই,আমি জানি না মানব জাতি আজ পর্যন্ত কোন বসতি খুঁজে পেয়েছে কিনা,নাকি জগৎ থেকে হারিয়ে গেছে চিরতরে।"
"আমার বক্তব্য আমি এখানেই শেষ করছি এবং আপনি যে রুমে শুয়ে আছেন তা এখন উন্মুক্ত হয়ে যাবে আর আপনি দেখতে পারবেন আপনার বহু আখাঙ্কিত ৪৯ হাজার পরের পৃথিবী।
শুভ বিদায় মহামান জেভেনা।"

ভিডিওট বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে যেন রুমের চারদিকের দেয়াল ধপ করে পড়ে গেল।
চারদিকে সবুজে ঘেরা!
পাহাড়,গাছ আর অজানা সব লতাপাতা উদ্ভিদ-বৃক্ষে ভরা!
মহামান্য জেভেনা,মহামান্য ফ্রেবের কথার সাথে অসংগতিপূর্ণ এই দৃশ্য দেখে মোটেও অবাক হলেন না। কারণ ৩০ হাজার বছর বিশাল সময় এই সময়ে পৃথিবীর সকল স্থাপত্য ধ্বংস হয়ে গিয়ে ধুলোবালি মাটির নিচে চাপা পড়েছে। এরপর ধীরে ধীরে জাগ্রত হয়েছে উদ্ভিদ লতাপাতা গুল্ম বৃক্ষ।কেননা মানুষ নামক  লোভী জন্তু এই সময় তাদের নির্যাতন করার জন্য উপস্থিত ছিল না।
 কিন্তু তিনি কতিপয় মানুষকে দেখতে পেলেন,যারা তার দিকে অবাক হয়ে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে।
"আধুনিক যুগের সভ্য মানুষ" অতীতকালে যাদের "প্রস্তর যুগের মানুষ" " অসভ্য মানুষ" বলে সম্বোধন করতো। মনে হল তিনি যেন ভুল করে অতীতে চলে এসেছে। তবে এটাও তাকে মোটেও অবাক করল না। মহামান্য ফ্রেব যতই বলুক পৃথিবীর অর্ধেক মানুষকে নির্মূল আর বাকি অর্ধেক মানুষকে মহাকাশযানে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে,তবুও পৃথিবীর অল্পসংখ্যক মানুষ হয়তো পৃথিবীতেই থেকে গিয়েছিল,সকলের আড়ালে।
আর এসব থেকে যাওয়া মানুষ প্রতিনিয়ত এক অজানার শূণ্যতার ফলে সভ্যতা থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরে গিয়েছে এবং সম্পূর্ণ অসভ্য হয়ে আবারও লড়াই শুরু করেছে সভ্যতা অর্জনে।
 ঠিক যেমন সৃষ্টির শুরুতে মানবজাতিকে লড়াই করতে হয়েছিল সভ্যতার ছোয়া পেতে।
 "আচ্ছা, এরা আবার সভ্য হয়ে পূর্ববর্তী মানুষের মতো আচরণ করে নিজেদের অসভ্য বানিয়ে ফেলবে না তো?"
" আমার নিজের যুগের মানুষেরাও কি পূর্ববর্তী সভ্য মানুষের লালসার শিকার হয়ে সভ্যতার দিকে যাত্রা শুরু করেছিল?"
মহামান্য জেভেনার অবাক হয়ে বললেন,"মানবজাতির এ কেমন অনিশ্চয়তার যাত্রা?"

লেখকঃ
সাজ্জাদুর রহমান

No comments

Theme images by dino4. Powered by Blogger.