এমা(Sci-fi)
এমা
খুব ঘুম পাচ্ছে। কিছুতেই কাজ কমপ্লিট
করতে পারছি না। এদিকে কাজ ফেলেও রাখা যাবে না ।
এই
কাজের মধ্যে আমি কোনোই নতুনত্ব খুঁজে পাই না।একটা টেলিস্কোপের
সামনে বসে দূরে বসে থাকা গ্রহ , উপগ্রহ , নক্ষত্র, গ্যালাক্সির চালচলনের দিকে তাকিয়ে থাকা আর তা নিয়ে রিপোর্ট
করা।আমাদের তিনজনের মধ্যে রুডো অবশ্য এই বিষয়ে বেশ আগ্রহী । কিন্তু স্পেসশিপের ম্যাকানিজমে আর কন্ট্রোলিং-এ আমার ইন্টারেস্ট। এমন
সময় হঠাৎই হিলারি ম্যামের প্রবেশ।
"তোমাদের
রিপোর্ট রেডি?", টেলিস্কোপে চোখ রাখতে রাখতেই ম্যামের
কঠিন প্রশ্ন।
লিস্টোর হাস্যজ্জ্বল উত্তর, " হ্যাঁ , ম্যাম।"
আমি আর রুডো নিশ্চুপ। একটু অবাকই হলাম বটে ! রুডোকে কখনো এমন করতে দেখেনি।
![]() |
www.google.com |
" যাক ভালোই
হয়েছে রুডোর সাথে সাথে নাতাশা আর এ্যালেনকেও সঙ্গী হিসেবে পাওয়া যাবে ",
ঝিমুতে ঝিমুতেই মনে মনে ভাবছি।
দশ বছর বয়স
থেকে এখানে ট্রেনিং নিচ্ছি আমরা। এখন আমরা সকলেই পনেরতে পদার্পণ করেছি। এখনো মনে
আছে আমি যেখানে থাকতাম , সেখানে আমার মতো দেখতে আরো
তিনজন ছিল। তিনজনই দেখতে অবিকল একই ছিলাম। আমি ছিলাম এমা-১। পরবর্তী দুইজন
যথাক্রমে এমা-২ এবং এমা-৩। ওখানেই আমাদের প্রাথমিক ট্রেনিং দেয়া হয়েছে। তারপর
আমাদের দশ বছর বয়সে আমরা আলাদা হয়ে যাই। সেদিন আমরা তিন এমা মিলে প্রচুর অশ্রু
ঝরিয়েছিলাম।ওরাও এখন আমার মতো হয়তো কোনো এক স্পেসশিপে বসে ট্রেনিং নিচ্ছে। ,
রুডো ,লিস্টো, নাতাশা,এ্যালেন আমরা সকলেই এক একজন ক্লোন । একটা মিশনের কারণেই আমাদের
সৃষ্টি। আমাদেরকে ট্রেনিং দেওয়া হচ্ছে সারাজীবন ধরে স্পেসে ঘুরে নানান ধরনের তথ্য
বিজ্ঞানীদের দেওয়া , মহাবিশ্ব সম্পর্কে যথাসম্ভব চাক্ষুষ
তথ্য পৌঁছে দেওয়া এবং একই সাথে মহাবিশ্বের অন্য কোনো প্রাণের অস্তিত্ব থাকলে তা
খুঁজে বের করা। আমাদের যখন বিশ বছর বয়স হবে তখন এই স্পেসশিপের এবং যাবতীয়
গবেষণার দায়িত্ব আমাদের দিয়ে দেওয়া হবে। সাথে আরো কিছু ক্লোনকে আমাদের কাছে
হস্তান্তর করা হবে ট্রেনিং দেওয়ার জন্য, যাতে এই গবেষণা
কার্যক্রম কখনোই স্থগিত না হয়।
এইসব ভাবতে ভাবতেই হেঁটে চলেছি SMFD-1 রুমের দিকে। হিলারি ম্যামের নির্দেশ ,
ওখানেই আমাদের পানিশমেন্ট অপেক্ষারত। আমাদের পানিশমেন্টটা আগের
কাজের মতোই। পর্যবেক্ষণ করতে হবে আরো দূরের গ্যালাক্সি আর সাথে একটা নতুন কাজ
যুক্ত হয়েছে। কোনো ভিনগ্রহের অচেনা প্রাণি আমাদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে
কিনা সেইদিকেও খেয়াল রাখতে হবে, স্পেসশিপের এ্যান্টেনা
যদি কোনো ফ্রিকোয়েন্সি ধরতে পারে তবে তা এনালাইসিস করাই আমাদের দায়িত্ব। আমরা
সবাই যে যার মতো কাজ শুরু করে দিলাম। আমি এখনো ঝিমুচ্ছি।ঝিমুনোর মূল কারণ ঐ
লিস্টো।ওর বকবক শুনতে শুনতে আমি একটুও ঘুমুতে পারিনি। কিন্তু ও দিব্যি নিজের কাজ
শেষ করে রেস্ট নিচ্ছে।
প্রায় ঘন্টাখানেক হয়ে গেল। কোনো
কিছুই পেলাম না । হঠাৎ করেই নাতাশার কর্কশ গলার ভয়ঙ্কর চিৎকার।
" কি হয়েছে?"
বিস্ফোরিত নয়নে এ্যালেনের প্রশ্ন।
নাতাশা তার ভয়ঙ্কর গলায় বলতে লাগলো, " আমাদের স্পেসশিপের এ্যান্টেনা
কিছু.."
আমি ওকে থামিয়ে দিয়ে বললাম, " তুই আস্তে কথা বলনা ! আমাদের কানে
কোনো সমস্যা নেই।"
ও আমাকে অগ্রাহ্য করে পুনরায় বলতে
শুরু করল , " আমাদের
স্পেসশিপের এ্যান্টেনা কিছু ফ্রিকোয়েন্সি ধরতে পেরেছে। আমি ওগুলো এনালাইসিস
করেছি । ওরা ওলেরি গ্যালাক্সির দৃথিস গ্রহের বাসিন্দা।ওরা আমাদের কাছে হেল্প চাচ্ছে। কি বিষয়ে তা বলেনি।তবে
ওদের গ্রহে আমাদেরকে যেতে বলছে খুব তাড়াতাড়ি।"
রুডো একটু চিন্তিতস্বরে বলল, " কিন্তু হিলারি ম্যাম বা জ্যাক স্যার
কেউই তো নেই। স্কাউটশিপে করে স্পেসস্টেশনে গেছেন। আমারা কিভাবে ওদের হেল্প করতে
ওখানে যাব ?"
"ওরা বারবার
সিগন্যাল পাঠাচ্ছে ওদের হেল্প করার জন্য। আমাদের যাওয়া উচিত।আমরা ডি-৬
স্কাউটশিপটা নিয়ে ওদের কাছে যাব আর ওদের হেল্প করে ম্যামদের আসার আগেই ফিরে
আসবো" , খুব আগ্রহের সাথে নাতাশার এ উক্তি।
রুডো বলল,"গুড আইডিয়া। কিন্তু রোবটগুলো তো যেতে
দিবে না।"
এ্যালেন প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বলল ,"আরে আমাদের লিস্টো ঐ রোবটগুলোর
সিস্টেম হ্যাক করে ওদের অচল করে দেবে।স্কাউটশিপটা কন্ট্রোলের দায়িত্ব এমা আর
রুডো নিক। তাহলেই হয়!"
সবাই এই ব্যাপারে খুবই সিরিয়াস।
লিস্টো তার নিজের গবেষণাগারে নতুন
কিছু বানানোর চেষ্টায় মগ্ন ছিল। ও সবসময়ই কিছু না কিছু ইনভেন্ট করার চেষ্টায়
থাকে। কিন্তু যা বানাতে চায় সবসময় তার উল্টো কিছুই বের হয়।
যাই হোক ওকে আমাদের প্ল্যান সম্পর্কে
বুঝিয়ে বলা হলো । সব শুনে লিস্টো ভয়ভীত কণ্ঠে বলল,
"আমরা ওদের সম্পর্কে কিছুই জানি না। যাওয়াটা কি ঠিক হবে?
তাছাড়া ম্যাম আর স্যাররাও তো নেই।"
নাতাশা অতিউত্তেজিত কণ্ঠে বলল, "প্রতিদিন একঘেয়ে জীবন আর ভালো লাগছে
না । দেখ, যদি যাই একটা অ্যাডভেনচার হবে। নতুনত্ব আসবে
জীবনে।মিশন সাকসেসফুল হলে পুরস্কৃতও হতে পারি।"
কাজ শুরু করে দিয়েছে সবাই। সকলেই বেশ
আগ্রহী । সম্পূর্ণটাই জীবনে একটা নতুন স্বাদের জন্য করা ।
আমরা ঐ অজানা প্রাণিদের সাহায্য করতে
এগিয়ে চলেছি।
হঠাৎ করেই
লিস্টো চিৎকার করে উঠে বলল, "তোদের তো বলতেই ভুলে
গেছি। আমি না একটা নতুন ডিভাইস ইনভেন্ট করেছি।এই ডিভাইসটার মাধ্যমে আমরা গায়েব
হয়ে যেতে পারব । দাঁড়া এক্সপেরিমেন্ট করে দেখাচ্ছি ।"
সঙ্গে সঙ্গে হাসির রোল পড়ে গেল।হাসি
সামলে রুডো বলল," নারে! কোনো
দরকার নেই।তোর এক্সপেরিমেন্ট সবসময় উল্টোই হয়।কি করতে কি করে ফেলবি। বাস্তব রূপে
পরে আর ফিরে আসতে পারব না।"
সবাই আবার হেসে উঠলো।
আমরা পৌঁছে গিয়েছি। কিছুক্ষণ আগেই
ওরা ওদের লোকেশন দিয়ে দিয়েছে। যাওয়ার পথে তেমন কাউকেই দেখলাম না। আমাদের মূল
গন্তব্যে পৌঁছলাম।এক বিশাল গেইট।গেইটের সামনে যাওয়া মাত্রই গেইট খুলে গেল।দেখে
কোনো বিশাল ল্যাব মনে হচ্ছে। ভেতরে ঢুকা মাত্রই আমাদের পিছনে কিছু লোক এসে
দাঁড়ালো এবং আমাদের সকলকে ল্যাঙ্গুয়িজ ট্রান্সফরমার দিল । এমন সময় একজন লোক
এসে আমাদের সামনে দাঁড়ালো। দেখতে আমাদেরই মতো কিন্তু পা নেই ভেসে বেড়াচ্ছে । এতক্ষণ
খেয়ালই করিনি যে আমাদের পিছনের লোকগুলোও ভেসে আছে।। ঘরটা নানা যন্ত্রপাতিতে ভরপুর
। সবাই চারিদিকটা অবাক হয়ে পর্যবেক্ষণ করছি।এ্যালেনই এগিয়ে গিয়ে বলল ," আপনারা আমাদের থেকে কি বিষয়ে হেল্প
চাইছেন, জানতে পারি?"
"অবশ্যই।
কিছুক্ষণের মধ্যেই জানবে", লোকটির প্রত্যুত্তর।
"এসো , তোমরা আমার সাথে এসো।"
"কিন্তু কোথায়?"
" এসোই না।কোনো
ভয় নেই। "
একটা ঘরে ঢুকতেই দেখি হিলারি ম্যাম
আর জ্যাক স্যার । সঙ্গে সঙ্গে আমাদের হাতের গানগুলো নিয়ে নেওয়া হয়। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না।
আমাদেরকে ঠেলে ভেতরে ঢুকিয়ে দরজা
বন্ধ করে দেয়া হলো।
"স্যার
, ম্যাম। আপনারা ?"সমস্বরে আমাদের
চিৎকার।
"ম্যাম ,
আপনারা এখানে কিভাবে এসেছেন?", সকলেরই
প্রশ্ন।
" ওরা আমাদের
কাছে হেল্প চেয়ে এভাবে ট্রেপে ফেলেছে ।"
আমি জিজ্ঞেস করলাম, "কিন্তু ম্যাম, ওদের উদ্দেশ্যে কি?"
"ঐ লোকটা এমন
একটা যন্ত্র আবিষ্কার করেছে যেটার ভেতরে আমাদের ঢুকালে ঐ ডিভাইসটা আমাদের এ্যান্টিম্যাটার
তৈরি করে ফেলবে।আর সাথে সাথে আমরা শেষ। কারণ তোমরা তো জানোই আমরা যদি আমাদের সমান
এ্যান্টিম্যাটারের সম্মুখীন হই , তাহলে আমরা সাথে সাথে
নিশ্চিহ্ন হয়ে যাব । আর প্রচুর শক্তি উৎপাদিত হবে।ওরা মূলত সেই শক্তির জন্যই
সবকিছু করছে।"
"কিন্তু ম্যাম
, ওরা তো আমাদের হাত-পা কিছুই বাঁধেনি । আমরা তো কিছু
করতে পারি", রুডো বলল।
এমন সময় জ্যাক স্যার বলল, " কোনো লাভ নেই।এই ঘরে একটা ছোট
ছিদ্রও নেই। আমাদের হাতের অস্ত্রগুলো তো কেড়ে নিয়েছে ।সাথে যে গোপন অস্ত্র ছিল
তাও কেড়ে নিয়েছে। আমরা যখন ঢুকছিলাম তখনই ওরা গোপনে স্ক্যান করে নিয়েছে।
এইজন্যই ওরা নিশ্চিন্তে আমাদেরকে হাত পা খোলা রেখে চলে গেছে।"
এমন সময় ঐ লোকটা তার বডিগার্ডসহ
প্রবেশ করল।
" আপনাদের এখন
আপনাদের এন্টিম্যটারের সাথে দেখা করার জন্য প্রস্তুত হতে হবে। আমার এক্সপেরিমেন্ট
আজ সফল হবে।হা..হা..হা....।"
ডিভাইসটার সামনে চলে এসেছি। একটা
কথাতো আমি ভুলেই গিয়েছিলাম!লিস্টোকে ধাক্কা দিয়ে বললাম, " তাড়াতাড়ি তোর ওই ভ্যানিশ হওয়ার
যন্ত্র দিয়ে আমাকে আর নিজেকে গায়েব কর।কুইক !! " লিস্টো তাই করল।
লোকটা চিৎকার করে বলল , " আরো দুইজন কোথায় গেল ?
" যাক লিস্টোর ডিভাইসটা কাজ করেছে।
আমি আর লিস্টো দৌড়ে গিয়ে সামনে রাখা
গানগুলো দিয়ে শুট করলাম। ধপাস করে ঐ লোকটা আর তার সৈন্য পড়ে গেল। এরপর লিস্টোর
যন্ত্রের কেরামতির ফলে আগের রূপে ফিরে এলাম । স্যার আর ম্যামসহ স্কাউটশিপে উঠে
বসলাম। কিন্তু স্টার্ট হচ্ছে না স্কাউটশিপটা। আমি বলছি , " স্টার্ট দে রুডো , স্টার্ট দে।"
"একি ! তুই
স্টার্ট দে স্টার্ট দে কেনো করছিস? সারাক্ষণ ধরে
ঘুমাচ্ছিস। জানিস? আমাদেরকে কোনো এক অজানা প্রাণি সিগন্যাল
পাঠাচ্ছে ", চোখ খুলে দেখি নাতাশা। স্বপ্ন ছিল সব!
" নাতাশা
কোনো রিপ্লাই দিবি না খবরদার! আর ম্যামদেরকে শীঘ্রই খবর পাঠা,কেউ হেল্পের জন্য সিগন্যাল পাঠালে যেন না যায়। দে আর ভেরি
ডেঞ্জারাস!"
লিখেছেনঃ
সুদীপ্তা দে
সিটি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় , চট্টগ্রাম।
No comments