আগন্তুক (Sci-fi)

আগন্তুক

 সন্ধ্যা সাত টা বাজে।গ্রামে যেন নিস্তব্ধতা নেমে এসেছে।তবে চায়ের দোকান একটু ব্যাতিক্রম বলা চলে।সন্ধ্যা হলেই এখানে লোকজনের আনাগোনা বেড়ে যায়।মানুষ সারাদিনের ক্লান্তি কাটিয়ে উঠতে চা খায় আর আড্ডা দেয়। আমি ঢাকার ছেলে ঢাকায় বড় হয়েছি,গ্রামের এসব বিষয় আমার খুব কম জানা।সে জানার আগ্রহ থেকেই বিজয়দের গ্রামে বেড়াতে আসা।গ্রামে আমার ভালই লাগছে,প্রকৃতির কি অপরূপ সৌন্দর্য। তবে গ্রামে আসবো আর রাতের চায়ের দোকানের অভিজ্ঞতা টা মিস করবো এটা হয় না।তাই চায়ের দোকানে আসা।

 বিজয় দুটো চায়ের কথা দোকানিকে বলতেই তিনি চা বানাতে ব্যাস্ত হয়ে পরলেন।এখান কার স্পেশাল গুড়ের চা।আমি আর বিজয় একটা বেঞ্চে বসে পরলাম।শীতের সন্ধা তাই মানুষজন খুবই কম।আমার আর বিজয়ের মধ্যে তুমুল বাক যুদ্ধ হচ্ছে টেলিপ্যাথি নিয়ে।বিজয় মনে করে টেলিপ্যাথি সম্ভব।তবে আমি এর ঘোড় বিরোধী কেননা এর কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেইচা খেতে খেতে কথা বলার এক পর্যায়ে আমাদের পাশের বেঞ্চে বসে থাকা এক লোক বলে উঠলেন টেলিপ্যাথি সম্ভব।তিনি বললেন,টেলিপ্যাথি যে সম্ভব তা প্রমান স্বরূপ আমি তোমাকে একটা ঘটনা বলতে পারি,তবে সেটা তোমার কাছে পাগলের প্রলাপ বা গাজাঁখুরী আলাপ মনে হতে পারে,তাতে আমার কিছু যায় আসে না,তুমি কি শুনবে?

www.bengalitranslator.net

তখন বিজয় আমার কানের কাছে এসে বললো এই লোক নাকি একজন উচ্চশিক্ষিত ব্যাক্তি,তবে মানসিক সমস্যার কারণে বর্তমানে পাগলের প্রলাপ বকে।তবে আমার কেন যেন লোকটার বাচন ভঙ্গি দেখে মনে হলো সে আসলেই কিছু জানে।তাই আমি আরেক কাপ চায়ের অর্ডার দিয়ে লোকটাকে বললাম,শুনি আপনার কি ঘটনা।

তারপর লোকটা তার গল্প বলতে লাগলেন যা আমি তার ভাষায় আপনাদের বলছি,

 সে অনেকদিন আগের কথা,আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জিয়োলজি নিয়ে পড়ি।স্বাভাবিক ভাবেই গ্রামে থেকে লেখাপড়া সম্ভব না তাই হলে থেকে পড়তাম।তখন যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো ছিলো না।হয় ডাকে চিঠি লিখতে হতো নয়তো টেলিগ্রামে তার করতে হতো।সে যেটাই করি না কেন খবর পৌছতে পৌছতে এক সপ্তাহ লেগেই যেত।তাই বাড়িতে তেমন যোগাযোগ হতো না।একরকম ভাবে বাড়ি থেকে আমি বিচ্ছিন্ন। তখন হঠাৎ কিছুদিন যাবৎ আমার মাথাব্যথা দেখা দিলো।মাধা ব্যাথা করতো একটা নির্দিষ্ট সময়ে।প্রতিদিন সন্ধা ছয়টার একুশ মিনিট থেকে সাতটার নয় মিনিট পর্যন্ত মাথাব্যথা করত।এসময় আমি একটা অদ্ভুত নারী কন্ঠ শুনতে পেতাম প্রতিদিন।সে আমাকে প্রতিদিন এ সময়ে বলতো,আমার সময় শেষরে বাপজান শেষ দেখাটা দেখবি না?

তখন আমি কিছুই বুঝতে পারতাম না,কে এই নারী কন্ঠ,এই কথাটার মানেই বা কি,এ নির্দিষ্ট সময়েই কেন আমি এ কথা শুনি।

উত্তরটা পেতে বেশি অপেক্ষা করতে হয় নি।এই মাথাব্যথা আর প্রলাপ শুনা শুরু হবার ঠিক সাতাশ দিনের মাথায় আমার মা মারা যায়।কাকতালীয় ভাবে তিনি মারা যায় আনুমানিক ছয়টার একুশ মিনিট থেকে সাতটার নয় মিনিটের মাঝেই এবং তার শেষ মরার আগে উচ্চারিত শেষ বাক্য ছিলো "আমার সময় শেষরে বাপজান শেষ দেখাটা দেখবি না?"যা তিনি বলেছিলেন আমায় উদ্দেশ্য করে।

 

এতক্ষণ লোকটার কথা শুনছিলাম।এখন মুখ খুললাম।তাকে বললাম এতেই কি প্রমাণ হয় এটা টেলিপ্যাথি ?কাকতালীয় ব্যাপার তো হতেই পারে,এমন তো প্রায় ই শুনা যায়।উত্তরে সে বললো আমি আগেই বলেছিলাম আমার কথাগুলো আপনার কাছে পাগলের প্রলাপ মনে হবে।তবে বিষয়টা আমার সাথে ঘটেছে তাই আমি জানি আর এটাই একমাত্র ঘটনা নয়।পরের ঘটনা তো আরোও অবিশ্বাস্য।

আমি লক্ষ  করলাম যে লোকটার কথা শুনতে শুনতে কখন যে দোকানি চা দিয়ে গিয়েছে তা দেখিই নি।তাই আরেক কাপ চায়ের অর্ডার দিয়ে লোকটাকে বললাম,শুনি আপনার পরের ঘটনা।

এদিকে আমি লোকটার গাজাঁখুরী গল্প শুনছি দেখে বিজয় হয়তো একটু বিরক্তই হয়েছে আমার উপর।তাতে অবশ্য আমার কিছু করার নেই,আমি লেখালেখি করি তাই অনেক গল্প ও শুনি সেটা ও জানে ভালো করেই।

তো লোকটা আবার পরের ঘটনা বলতে লাগলো যা তার ভাষাতেই আমি বলছি,

 আপনারা হয়তো ভাবছেন আমার মা মারা গেছেন,আমি গিয়ে মাটি দিয়ে এসেছি।তবে তা কিন্তু না।আপনারা জানেন তখনকার যোগাযোগ ব্যাবস্থা এত খারাপ যে আমার মার মৃত্যু সংবাদ আমার কাছে পৌছতে কম করে হলেও তিন দিন তো লাগাই কথা।আমি খবরটা জানতেও পেয়েছি তিন দিন পরেই।তিনি মারা যায় নয় সেপ্টেম্বর, আমার কাছে খবর পৌছয় বারো সেপ্টেম্বর। স্বাভাবিক ভাবেই মা আমাকে শেষ দেখাটা দেখতে পায় নি।আপনারা হয়তো ভাবছেন আমিও দেখতে পাই নি।তবে না,তা নয়। আমি দেখতে পেরেছি।নয় সেপ্টেম্বর আমার মাথা ব্যাথাটা প্রতাদিনের মতই শুরু হয়,তবে আজ এত তীব্রভাবে যে আমি আর সহ্য করতে পারি নি।হলে শুয়ে ছিলাম,সেখানেই জ্ঞান হারাই।তার মাঝে আমি একটা স্বপ্ন দেখতে পাই আমি।

আমার মা একটা খাটে শুয়ে আছেন।হঠাৎ তার বুকটা উচু হয়ে গেলো।তার চোখ গুলো কেমন জানি লাল হয়েছিল।তিনি কুকাচ্ছিলেন।এটাই বুঝি মৃত্যু যন্ত্রনা।তারপর হঠাৎ তার বুকটা আগের মত নিচু হয়ে যায়।তার দু-মিনিট পর ভাবি ঘরে ঢুকে মা কে ডাক দেয় খাওয়াবেন বলে,তবে সে আর কোনো প্রতিক্রয়া করে না।সে যে মৃত্যু একটু পর সবাই বুঝতে পারলো সে মারা গেছেন।বাড়িতে কি কান্নাকাটি লেগে গেল। তবে আমি কিছুই করতে পারছি না।নারাচারা কথা বলা কিচ্ছু না।আসলে আমি ঘরের দেয়ালে পরিণত হয়েছি।তখন হঠাৎ আমার জ্ঞান ফেরে,নিজেকে হলে আবিষ্কার করি।ভেবেছিলাম এটি স্রেফ একটা দূ-স্বপ্ন।তবে এটা সত্যি প্রমানিত হয় ঠিক তিন দিন পরেই।আসলে তিন দিন পরে নয়,ঘটনা টা ঐ দিন ই ঘটেছে তবে আমি বুঝতে পারি তিন দিন পরে।স্বপ্নে যা যা দেখেছি তার সবই বাস্তবে ঔ সময় হয়েছে তবে সেই দেয়ালটার মধ্যে আমি ছিলাম।সেখান থেকে জড় পদার্থের মতো সবকিছুর সাক্ষী হয়েছি।

 

এতক্ষণ চুপ করে লোকটার কথা শুনছিলাম,আর চুপ থাকতে পারলাম না,কিছুটা বিরক্তির সুরে বললাম,আপনি কি মনে করেন এখানে টেলিপোটেশন হয়েছে?উত্তরে লোকটা বললো এছাড়া আর কোনো উপযুক্ত ব্যাখ্যা নেই আমার কাছে।

আমি এখন অনুভব করলাম এ লোকটা আসলেই পাগল।বিজয়ের কথাটাই ঠিক।শুধু শুধু বন্ধ পাগলের গাজাঁখুরী গল্প শুনলাম।তাই আর কথা না বলে তারাতারি চায়ের বিল দিয়ে যেই না বের হয়ে আসবে দোকান থেকে তখন সেই লোকটা বললো টিটু আহমেদ,আমার কথাটা হয়তো আপনার কাছে পাগলের প্রলাপ মনে হয়েছে তাই না?তা হলে আমার কিছু যায় আসে না।তবে গত সতের দিন আগে আপনার বন্ধু আত্মহত্য করেছে সে জন্য আমি খুবই কষ্ট পেয়েছি।আপনি চাইলেই তাকে বাচাঁতে পারতেন।

কথাটা বলেই লোকটা নিজের সাইকেল নিয়ে দোকান থেকে বের হয়ে চলে গেল।

আমি কিছুক্ষণের জন্য খুবই বিব্রত বোধ করলাম।আসলেই গত সতের দিন আগেই আমার রুম মেট আত্মহত্য করেছে,তাই হাওয়া বদল করতেই আমি বিজয়দের গ্রামে এসেছি।তবে এটা তো ঐ লোকটার জানার কথা নয়।সে কি করে জানতে পারলো?

তাহলে কি সে আসলেই টেলিপ্যাথি কিংবা মাইন্ড রিডিং পারে।আচ্ছা কে সে,কি পরিচয় এই আগন্তুক এর।

জানা হলো না আর।

 


লিখেছেনঃ 

নাম:মাহমুদুল হাসান আরিন

শ্রেনি:দশম


 

 


1 comment:

Theme images by dino4. Powered by Blogger.