এলিয়েনওয়্যার এন্ড টাইম ট্রাভেল

এলিয়েনওয়্যার এন্ড টাইম ট্রাভেল


মি. কলিন এক বিশেষ সফটওয়্যার নিয়ে গবেষণা করছেন। এই সফটওয়্যার পৃথিবীর সফটওয়্যার হোয়াইট লিস্টে, অর্থাৎ নিরাপদ সফটওয়্যার তালিকায় নেই। তার মানে এটি কোনো ম্যালওয়্যার, যা অসৎ লোকেরা কম্পিউটারের তথ্য চুরি, পরিবর্তন, এনক্রিপ্ট করে এবং আরো বিভিন্নভাবে মানুষের ক্ষতি করার জন্য তৈরি করে। কিন্তু এই সফটওয়্যারটি এমন একটি প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ ব্যবহার করে ডেভেলপ করা হয়েছে, যা এখনও পৃথিবীতে তৈরি হয়নি। তিনি এই সফটওয়্যার নিয়ে অনেক গবেষণা করে এর সম্পর্কে একটি ডায়েরিতে তাঁর গবেষণার ফলাফল লিখলেনতিনি বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সুপার কম্পিউটার ‘summit’-এর দেখাশোনার দায়িত্বপ্রাপ্ত মি. লুসেমকে তাঁর গবেষণার ফলাফল জানানোর জন্য বাড়ি থেকে বের হন। কারণ এই ম্যালওয়্যারটি summit-এই ধরা পড়েছিলো। রাস্তায় যেতে যেতে তিনি হঠাৎ জঙ্গল থেকে শব্দ শুনতে পেলেন, ‘কলিন, ভবিষ্যতের পৃথিবীকে তোমার প্রয়োজন। এখানে তোমার কোনো কাজ নেই। এদিকে এসো কথাগুলো যেন তাঁকে হিপনোটাইজ করে দিলো। তিনি জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে পড়লেন। ডায়েরিটি তাঁর হাতেই আছে। তিনি জঙ্গলের গভীরে ঢুকে যাচ্ছেন। জঙ্গলের গভীরে তিনি যেন চিরতরে হারিয়ে যেতে চলেছেন, অন্য কোনো জগতে।

এলার্মের শব্দে মরিসের ঘুম ভাঙলো। এটা কি কোনো স্বপ্ন ছিলো? সে কি ২০ বছর আগে ঘটে যাওয়া সেই ঘটনা দেখলো? স্বপ্নের জায়গাটি তাঁর চেনা। সে একবার ওই জায়গায় গিয়ে চেক করার সিদ্ধান্ত নিলো। ২০ বছর আগে তার বাবা মি. কলিন তৎকালীন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী কম্পিউটারের সুরক্ষার দায়িত্বে ছিলেন। তিনি তখন ‘summit’-এ অ্যাটাক করা ম্যালওয়্যার নিয়ে গবেষণা করছিলেন, ঠিক যেমন মরিস আজ কোয়ান্টাম কম্পিউটারসিকামোর’-এ অ্যাটাক করা ম্যালওয়্যার নিয়ে গবেষণা করছে। কলিন নিজের লেখা সেই ডায়েরি সহ ২০ বছর আগে নিখোঁজ হয়েছিলেন। মরিস কিছুক্ষণ বসে ভাবলো, সে আসলে স্বপ্নে কী দেখলো? কেউ মি. কলিনকে ভবিষ্যৎ থেকে ডাকছিলেন। তার মানে কি তিনি টাইম ট্রাভেল করেছেন? ভবিষ্যতে মানে তো যেকোনো সময়ে হতে পারে, কিন্তু মি. কলিনকে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি দরকার। তাহলে তো তাঁর এই সময় ফিরে আসার কথা। কিন্তু এটা কী করে সম্ভব?

আইনস্টাইনের বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব অনুযায়ী, গতি সময়কে স্লো করে। অর্থাৎ, কোনো বস্তু অত্যধিক গতিতে ট্রাভেল করলে তার সাপেক্ষে তার নিজের তুলনায় তার আশেপাশের বস্তুসমূহের সময় দ্রুত চলবে। অর্থাৎ, কোনো বস্তুর গতি বেশি হলে তার সাপেক্ষে তার নিজের সময় স্লো চলবে। আলোর গতিতে ট্রাভেল করলে তার সাপেক্ষে তার আশেপাশের বস্তুসমূহের সময় খুবই দ্রুত চলবে এবং বস্তুটির সাপেক্ষে সময় স্থির হবে।। ধরা যাক, A এবং B এর উভয়ের বয়সই ২০ বছর। এখন, A যদি আলোর গতিতে ট্রাভেল করতে সক্ষম কোনো মহাকাশযানে করে পৃথিবী থেকে মহাকাশের উদ্দেশ্যে রওনা হয়, তাহলে B এর সাপেক্ষে A এর কাছে থাকা ঘড়ি থেমে থাকবে (কারণ B-এর সাপেক্ষে A আলোর গতিতে পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে) এবং A-এর সাপেক্ষে B-এর কাছে থাকা ঘড়ি থেমে থাকবে (কারণ A-এর সাপেক্ষে B-ই আলোর গতিতে পৃথিবী সহ তার বিপরীত দিকে ছুটে যাচ্ছে, এবং A স্থির আছে)। অর্থাৎ, A-এর সাপেক্ষে তার নিজের সময় স্বাভাবিকভাবে অতিবাহিত হলেও B-এর সময় খুব দ্রুত চলবে। আবার, B-এর সাপেক্ষে তার নিজের সময় স্বাভাবিকভাবে অতিবাহিত হলেও A-এর সময় থেমে থাকবে। এভাবে B-এর সাপেক্ষে পৃথিবীতে ২০ বছর অতিবাহিত হওয়ার পর যদি A পৃথিবীর দিকে উল্টোপথে মহাকাশযান ঘোরায়, তবে এতে করে যে মন্দন ও ত্বরণ অনুভূত হবে তাতে পূর্বের প্রতিসাম্য ভেঙে যাবে এবং সে বুঝতে পারবে আসলে তার ঘড়িই থেমে ছিলো এবং B-এর ঘড়ি স্বাভাবিকই চলছিলো। এখন A যদি পৃথিবীতে ফিরে আসে, তাহলে তার বয়স ২০ বছরই থাকবে (কারণ আলোর গতিতে ট্রাভেল করায় তার সাপেক্ষে সময় দ্রুত অতিবাহিত হবে না), কিন্তু B এর বয়স (২০+২০)=৪০ বছর হয়ে যাবে। এখন A-এর বয়স ২০ বছর থাকতেই সে ৪০ বছর বয়সী B-এর সাথে দেখা করতে পারবে। তার মানে A ২০ বছর ভবিষ্যতে ট্রাভেল করেছে। এখান থেকেই টাইম ট্রাভেলের ধারণা এসেছে। তার মানে ভবিষ্যতে ট্রাভেল করতে হলে আলোর গতিতে ট্রাভেল করতে হবে! কিন্তু এটা অসম্ভব! কারণ কোনো বস্তুকে আলোর গতিতে ট্রাভেল করতে হলে তার ভর শূন্য হতে হবে! যা কোনো জীবেরই হতে পারে না। আলোর গতিতে শুধু ফোটন ট্রাভেল করতে পারে, কারণ এর ভর শূন্য! আলোও ফোটন দিয়ে গঠিত। যেহেতু মানুষের ভর শূন্য হতে পারে না, তাই মানুষের পক্ষে ভবিষ্যতে ট্রাভেল করা সম্ভব না।

সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব অনুযায়ী, উচ্চগতি ছাড়াও টাইম ট্রাভেল করা সম্ভব। কিন্তু তাও শুধু তাত্ত্বিকভাবেই সম্ভব, বাস্তবে নয়।

আবার, মি. কলিনকে ভবিষ্যতে নিয়ে আসার জন্য নিশ্চয়ই কাউকে অতীতে যেতে হয়েছিলো। আর অতীতে ট্রাভেল করার কোনো উপায় এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। তাত্ত্বকভাবে, ওয়ার্মহলের মধ্য দিয়ে অতীতে ট্রাভেল করা সম্ভব। ওয়ার্মহোল আজ পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি। তবে আবিষ্কৃত হলে এর সাহায্যে অতীতে ট্রাভেল করা সম্ভব হতেও পারে। কিন্তু তারও কিছু সমস্যা রয়েছে। যদি কেউ অতীতে ট্রাভেল করতে সক্ষমও হয়, তবুও সে অতীতকে পরিবর্তন করতে পারবে না। ধরা যাক, A অতীতে গেলো, যখন তার বাবার জন্মই হয়নি। এখন সে যদি তার দাদাকে হত্যা করে, তাহলে তার বাবার কখনো জন্মই হবে না। তার মানে A-এরও জন্ম হবে না। কিন্তু তার যদি জন্মই না হয়ে থাকে, তাহলে অতীতে গিয়ে তার দাদাকে হত্যা করলো কে? এটা অসম্ভব একটা ব্যাপার! এটাকেগ্র্যান্ডফাদার প্যারাডক্সবলা হয়। অতএব, কেউ অতীতে গিয়ে কোনো ঘটনা পরিবর্তন করতে পারবে না।

তারপরেও মরিসের মনে হলো একবার জায়গাটায় যাওয়া প্রয়োজন। সে তার বাড়ি থেকে কিছুদুরেই সেই জঙ্গলটির সামনে এসে দাঁড়ালো। এটা সেই জায়গা, যেখানে মরিস স্বপ্নে তার বাবাকে যেতে দেখেছিলো। কিছুক্ষণ জঙ্গলের ভেতরের দিকে হাঁটার পর মরিস কোনো বস্তুতে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলো। সে খেয়াল করে দেখলো পলিথিনে মোড়া একটি পুরাতন ডায়েরি। সে পলিথিন থেকে বের করে দেখলো, এর লেখক তার বাবাসে তখনই ডায়েরিটি নিয়ে বাড়ি ফিরে গেলো। সে সারারাতে ডায়েরিটি পড়ে শেষ করলো।সিকামোর’-এর কোনো রকম সমস্যা হলে তা সমাধানের দায়িত্ব মরিসের। সে একটি নতুন ম্যালওয়্যার নিয়ে চিন্তিত ছিলো। কিন্তু এখন সে এর সম্পর্কে সবকিছু জেনে গিয়েছে। এটি কোনো ম্যালওয়্যার না, বরংএলিয়েনওয়্যার মি. কলিন এর জীবনবৃত্তান্ত জেনে গিয়েছিলেন। এন্ড্রোমেডা গ্যালাক্সির একটি গ্রহের কিছু অসৎ লোক এইএলিয়েনওয়্যারবিভিন্ন গ্রহে পাঠিয়েছে। তারা কয়েক যুগ ধরে এই গ্রহগুলোর সকল তথ্য নিয়ে গবেষণা করে। সুযোগ বুঝে একসময় গ্রহ দখলের জন্য হামলা করে দেয়। মরিস প্রথমে চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলো। কারণ, এলিয়েনরা এইকরোনা ভাইরাসমহামারির সময়ের চেয়ে বড় সুযোগ আর পাবে না পৃথিবীতে হামলা করার। কিন্তু পরে সে মি. কলিনের তৈরি একটি প্রোগ্রাম সম্পর্কে জানতে পারে, যার সাহায্যে এলিয়েনওয়্যার-কে ধ্বংস করার সাথে সাথে এলিয়েনদের কাছে থাকা পৃথিবীর ঠিকানা সহ সকল তথ্য মুছে দেওয়া যাবে। মরিস এ সমস্ত কাজ করেও ফেললো খুব দ্রুত। পৃথিবী এখন এলিয়েনদের থেকে সুরক্ষিত। মি. কলিনের মতে, তারা কমপক্ষে ৫০০ বছরে আর পৃথিবীকে খুঁজে পাবে না।

কিন্তু মরিসের মনে কিছু প্রশ্ন থেকেই গেলো:

  • মি. কলিন কি সত্যিই টাইম ট্রাভেল করেছিলেন?
  • এলিয়েনওয়্যার পৃথিবীতে আসলো কীভাবে?
  • মহাবিশ্বে কি সত্যিই এলিয়েনের অস্তিত্ত্ব আছে?

সে এগুলোর কিছুর উত্তর মনে মনে অনুমানও করলো:

  • টাইম ট্রাভেল তো কোনোভাবেই সম্ভব না। তাহলে কী ঘটেছিলো মি. কলিনের সাথে? এর উত্তর মরিস সেই জঙ্গলটি আরেকবার পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে অনুমান করতে পেরেছিলো। সে জঙ্গলটির আরো গভীরে গিয়ে একটি বড় গর্ত দেখতে পায়। গর্তটির আকৃতি একটি মহাকাশযানের নিচের তলের মতো। মৃত্তিকা বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এই গর্ত ২০ বছর আগের।
  • প্রায় ২৫ বছর আগে পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা কিছু সময় ধরে মহাকাশ থেকে আশা রেডিও ওয়েভের সন্ধান পেয়েছিলেন, যা এলিয়েনদের প্রেরিত বলে বেশিরভাগ বিজ্ঞানী বলেছিলেন। হয়তো এর মাধ্যমেই এলিয়েনওয়্যার পৃথিবীতে এসেছিলো।
  • মহাবিশ্বে এলিয়েনের অস্তিত্ত্ব আছে কি না, সেটা এখনও নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। এমনকি মরিসও নিশ্চিত না। কারণ এটা সম্ভব, এলিয়েনওয়্যার বলতে কিছুই নেই। হয়তো মি. কলিনের ধারণা ভুল ছিলো, এটা মানুষের তৈরি কোনো ইউনিক ম্যালওয়্যারও হতে পারে। আর মি. কলিনের নিখোঁজ হওয়ার ব্যাপারে এখনো কোনো প্রমাণিত তত্ত্ব নেই। জঙ্গলের ওই গর্ত এমনিও সৃষ্টি হয়ে থাকতে পারে। এলিয়েন পৃথিবীতে নাও এসে থাকতে পারে। যদিও এমন অনেক গ্রহ বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছেন, যেখানে জীবনের অস্তিত্ব সম্ভব হতে পারে, তবুও তাঁরা কোনো গ্রহ সম্পর্কে 
  • নিশ্চিতভাবে বলতে পারেননি যে এই গ্রহে অবশ্যই এলিয়েন আছে।

 

লিখেছেনঃ

S.M. Rana Nawal

Gazipur Cantonment Public School and College


No comments

Theme images by dino4. Powered by Blogger.